৩৭ মাস পর জামিনে কারামুক্ত মাওলানা মামুনুল হক

:: গাজীপুর প্রতিনিধি ::

দীর্ঘ ৩৭ মাস কারাভোগের পর মাওলানা মামুনুল হক গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুক্রবার (৩ মে) সকাল ১১টায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মুহিউদ্দিন রব্বানি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি নাগরিক নিউজকে বলেন, ‘আজ বেলা ১১টার দিকে কারামুক্ত হয়েছেন মামুনুল হক।’

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা নাগরিক নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছায়। যাচাইবাছাই শেষে শুক্রবার সকাল ১১টায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। 

মামুনুল হক মুক্তি পাচ্ছেন এমন খবরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে কারাগারের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন তার সমর্থকরা। মুক্তি না পাওয়ায় পরে সমর্থকরা ফিরে যান।

২০২১ সালের মার্চে মোদীর সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জায়গায় যেসব সহিংসতা হয়েছে সেখানে আসামি করা হয় মামুনুল হককে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজত। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এর জেরে দেশে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে কয়েকজন মারা যায়। এসব ঘটনায় ২৭ মার্চ বিক্ষোভ ও ২৮ মার্চ হরতাল আহ্বান করে সংগঠনটি।

২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট -এর ভেতরে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাঁকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। এ সময় পুলিশ তাঁকে নজরদারির মধ্যে রাখে।

এরপর ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার হয় মামুনুল হককে। এই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছিলেন মামুনুল হক।

এরপর ওই মাসেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ ৩৭টি মামলা হয়। ওই ঘটনার ১৫ দিন পর মামুনুল হককে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর একাধিক মামলায় তিনি কাশিমপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন।

মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৩৭টি মামলা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে এসব মামলার মধ্যে ৩৬টিতে আদালত থেকে জামিন লাভ করেছেন। সর্বশেষ মামলায় তিনি বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন।

২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের জনসভা ঘিরে নাশকতার ১৫টি মামলায় তিনি এজাহারনামীয় আসামি।

২০২০ সালের মার্চে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাংচুরের মামলায় তিনি ৭ নম্বর আসামি। এছাড়া, রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি থানায় তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা আছে।

ডিবির মতিঝিল বিভাগে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ৮ টি মামলা তদন্তাধীন আছে। এছাড়া লালবাগ বিভাগে দু’টি, তেজগাঁও বিভাগে একটি এবং মতিঝিল ও পল্টন থানায় পৃথক চারটি মামলায় এজাহারনামীয় আসামি মামুনুল হক।

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাওলানা মামুনুল হক। তিনি  খেলাফত মজলিশ বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব ছিলেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *