■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টকে জানিয়েছে, মুনতাসির আল জেমি গত ৬ আগস্ট কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে।
আবরার ফাইয়াজ পোস্টে লিখেছেন, আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে গেছে গত বছরের ৫ আগস্টের পরে। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে আজকে, যখন ওর আইনজীবী কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে আসেনি তখন।
তিনি আরও লেখেন, ফাঁসির আসামি তো কনডেম সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কীভাবে! পালানোর পরেও এ তথ্য বাইরে না আসাতো এটাই প্রমাণ করে, তাকে ধরতেও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। পূর্বে থেকেই আরও তিনজন পলাতক আছে। মুনতাসির আল জেমি, পিতা-আব্দুল মজিদ, মাতা- জোসনা বেগম, ঠিকানা : ৫/১ বাউন্ডারি রোড, নতুন বাজার, কোতোয়ালি, ময়মনসিংহ।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি কীভাবে কারাগার থেকে পালিয়ে গেলেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।
আবরার হত্যা মামলার রায় যে কোনো দিন
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। এখন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। যে কোনো দিন রায় ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
শুনানি শেষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী জানান, আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে মধ্যে একদিন ছাড়া প্রতি কার্যদিবসে শুনানি গ্রহণ করেন আদালত। মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। এখন যে কোনো দিন মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় আসবে। যেদিন কার্যতালিকায় আসবে, সেদিন রায় ঘোষণা করা হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। এখন যে কোনো দিন রায় ঘোষণা হতে পারে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী ও রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ শুনানিতে ছিলেন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ শিশির মনির প্রমুখ শুনানিতে অংশ নেন।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
এ মামলায় আরো পাঁচ শিক্ষার্থীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নিম্ন আদালতের রায় খতিয়ে দেখতে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার নথি হাইকোর্টে পৌঁছায়। গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।