■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে পুরো ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিন মাসের মধ্যে এই সরবরাহ পূর্ণ মাত্রায় পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।
তবে বিদ্যুতের মূল্য ও কর–সুবিধায় যে ছাড় চেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটি দিতে রাজি হয়নি আদানি।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিল পরিশোধে বিলম্বের কারণে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেয়। এরপর ১ নভেম্বর ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ নিজেই বিদ্যুৎ সরবরাহ কমানোর অনুরোধ জানায়, যা আদানি পাওয়ার গ্রহণ করে।
গ্রীষ্মকাল শুরু হতে যাওয়ায় এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায়, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) অনুরোধে আদানি পাওয়ার পুনরায় পুরো সরবরাহ দিতে রাজি হয়েছে। ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু হলেও বাংলাদেশ যে কর ছাড় ও মূল্য সুবিধা চেয়েছিল, তা প্রত্যাখ্যান করেছে আদানি। বিপিডিবি গত মঙ্গলবার আদানি পাওয়ারের সঙ্গে একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে। তবে আলোচনার পরেও আদানি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি।
একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘আদানি পাওয়ার ছাড় দিতে রাজি নয়, এমনকি ১০ লাখ ডলারও নয়। বাংলাদেশ ছাড় চাইলেও আদানি চুক্তির শর্ত টেনে আনছে।’
এ নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সের আহ্বানে সাড়া দেননি। তবে তিনি আগেই বলেছিলেন, ‘আদানির সঙ্গে এখন বড় কোনো সমস্যা নেই এবং তারা শিগগিরই পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে যাচ্ছে।’
বিপিডিবির মাসিক বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৮.৫ কোটি ডলার থেকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে আদানি পাওয়ার দাবি করছে, তাদের পাওনা প্রায় ৯০ কোটি ডলার, যেখানে বিপিডিবি বলছে, এই পরিমাণ ৬৫ কোটি ডলার। এই পার্থক্যের মূল কারণ বিদ্যুতের শুল্ক হিসাবের পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ।
এর আগে বিপিডিবি আদানি পাওয়ারের কাছে কয়েক লাখ ডলারের কর–সুবিধা এবং ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত বিদ্যমান ছাড় পুনর্বহালের অনুরোধ করেছিল। তবে আদানি তাদের অবস্থান থেকে সরতে রাজি হয়নি।
আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় সম্পূর্ণ মাত্রায় চালু হলেও, মূল্যছাড় না পাওয়ায় বাংলাদেশকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। এতে বিদ্যুতের খরচ বাড়বে এবং সামগ্রিক জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকারের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে।
২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল আদানি। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত সংস্থাটি তাদের ২ বিলিয়ন ডলারের প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটের প্ল্যান্টটির প্রতিটি থেকেই একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করে তারা।
রয়টার্স বলছে, অর্থপ্রদানে বিলম্বের কারণে ভারতীয় এই কোম্পানিটি গত বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এর ফলে গত ১ নভেম্বর তাদের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে প্ল্যান্টটি প্রায় ৪২ শতাংশ সক্ষমতায় কাজ করছে।
পরবর্তীকালে, বাংলাদেশ আদানিকে মাত্র অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ বহাল রাখতে বলেছিল।
রাষ্ট্র-চালিত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) বলেছে, বকেয়া বকেয়া পরিশোধের জন্য তারা আদানিকে মাসে ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করছে এবং এখন কোম্পানিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে সরবরাহ পুনরায় শুরু করতে বলেছে।
ডলার পেমেন্ট করছি। আমরা আরও বেশি অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করছি, এবং আমাদের উদ্দেশ্য হলো ওভারডিউ কমানো। এখন আদানির সাথে বড় কোনও সমস্যা নেই।”
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি একটি বৈঠকের পর মঙ্গলবার বিপিডিবি এবং আদানির কর্মকর্তাদের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানিয়েছিল, বিপিডিবি কোম্পানির কাছে তাদের পাওনা ৯০০ মিলিয়ন ডলার। যেখানে রেজাউল করিম জানিয়েছিলেন, এর পরিমাণ প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।
মূলত আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধের কেন্দ্র হচ্ছে ২০১৭ সালের চুক্তি।
এই চুক্তি অনুযায়ী, দুটি সূচকের গড়ের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এর আগে রয়টার্স পৃথক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে নেওয়া বিদ্যুতের মূল্য ভারত থেকে সরবরাহকৃত অন্যান্য কেন্দ্রের বিদ্যুতের মূল্যের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।