আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, নিহত বেড়ে ৬২২

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

আফগানিস্তানে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৬২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দেড় হাজার মানুষ। এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬। জালালাবাদের পূর্ব-উত্তরপূর্বে ২৭ কিলোমিটার দূরে এবং ভূগর্ভের ৮ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তি হয়।

ইউএসজিএস আরও জানিয়েছে, প্রধান কম্পনের পর একই এলাকায় আরও দুটি আফটারশক আঘাত হানে, যার মাত্রা ছিল ৫.২। নানগারহার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আহতদের স্থানীয় আঞ্চলিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

আফগানিস্তানের গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শারাফাত জামান জানান, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাদেশিক হাসপাতালগুলোতে ৪০০-এর বেশি আহতকে ভর্তি করা হয়েছে এবং বহু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজকের রাতের ভূমিকম্পে আমাদের কয়েকটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।’

ভূমিকম্পের পর উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে ভূমিকম্পের পর দুর্গম পার্বত্য এলাকায় অনেক জায়গায় ভূমিধসে সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। আকাশপথে উদ্ধার অভিযান চালাতে সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান সরকারের কর্মকর্তারা।

দূরবর্তী এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা এখনও বাকি জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। রিখটার স্কেলে মধ্যরাতের এই ভূমিকম্প ১০ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হেনেছে। কুনার প্রদেশের তিনটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, এছাড়া অনেক গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এক গ্রামে প্রাথমিক প্রতিবেদনে ৩০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে এবং শতাধিক আহতকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আহতদের নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে। স্থানীয় মানুষরা সৈন্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে সহযোগিতা করে আহতদের অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দিচ্ছেন।

উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া সীমান্ত সংলগ্ন এই এলাকায় কাদা ও পাথরের ঘরগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই, তাই আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া উদ্ধার কাজ সীমিত থাকবে।

এফএমপির একজন মুখপাত্র জানান, এখনও কোনো বিদেশি সরকার উদ্ধার বা ত্রাণকাজে সরাসরি সহায়তা দেয়নি।

আফগানিস্তান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল, বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালার এলাকায়। এখানকার ভূমিকম্প বিশেষভাবে প্রাণঘাতী, কারণ ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটনিক প্লেটের সংযোগ স্থানে অবস্থান করছে। গত বছর দেশের পশ্চিমাঞ্চলে একাধিক ভূমিকম্পে ১০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল, যা প্রমাণ করে আফগানিস্তান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।

এই দুর্যোগ ইতিমধ্যেই মানবিক সংকটের মধ্যে থাকা দেশের সীমিত সম্পদকে আরও চাপ দিচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর কারণে আফগান জনগোষ্ঠীর জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *