আফগানিস্তানে আবারও ভূমিকম্প: নিহত বেড়ে ১৪১১

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে একই এলাকায় আবারও ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।  এদিকে, রোববার রাতে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪১১ জনে।

ইউএসজিএস’র ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) গভীরে।

এর আগে রোববারের ভূমিকম্পটি ছিল ৬ মাত্রার, যার কেন্দ্রস্থল ছিল প্রায় ৮ কিলোমিটার (৫ মাইল) গভীরে। ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুনার প্রদেশ। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও জীবিত কাউকে পাওয়া যায় কি না, সেই আশায় মরিয়া হয়ে চলছে উদ্ধারকাজ।

তবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সড়ক ও মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ আফগানিস্তান প্রায়ই এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। বিশেষত হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চলে, যেখানে ইউরেশীয় ও ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, সেখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি সবসময়ই বেশি।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী ইন্দ্রিকা রাটওয়াটে বলেন, আমরা আফগানিস্তানের মানুষদের ভুলতে পারি না। তারা একাধিক সংকট ও একাধিক ধাক্কার মুখোমুখি হয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

কুনার প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান এহসানুল্লাহ এহসান বলেন, ভূমিকম্পে সেখানকার চারটি গ্রাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার সেখানে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। আরও দুর্গম পার্বত্য এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা অনুমান করতে পারছি না, ঠিক কতগুলো মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার অভিযান শেষ করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা।

আফগানিস্তানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক মানুষ আটকে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশটিতে জাতিসংঘের সমন্বয়কারী বলেছেন, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থমকে গেছে। দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক সহায়তাও বন্ধ করে দিয়েছে। 

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার রাতেও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কুনার প্রদেশে। মূলত, মাটির মাত্র ৬ মাইল গভীরে এই ভূমিকম্প হওয়ায় বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। 

আফগান কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায়ও উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারেননি। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সারাফাত জামান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের এটি প্রয়োজন। কারণ, অনেক মানুষ তাদের জীবন ও ঘরবাড়ি হারিয়েছে। 

সরকারি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, গত রোববারের ভূমিকম্পের প্রভাব দেশটিকে দীর্ঘদিন বহন করতে হবে। কুনার প্রদেশের তিনটি গ্রামের প্রায় সব বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। এই প্রদেশেই নিহতের সংখ্যা ৬০০ জন।   

ধ্বংস চিহ্নের একটি কুনারের নুরগাল জেলার ঘাজি আবাদ গ্রাম। ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, অনেক বাসিন্দা সে ধ্বংস্তূপের নিচে আটকে আছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। উদ্ধার করছেন আটকে পড়াদের।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন, গ্রামের কোনো বসতবাড়িই আর টিকে নেই। এমন দুর্যোগ আমাদের বোঝাচ্ছে, জীবন এখানে যেকোনো মুহুর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *