■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
সিরিয়ার সংবিধান স্থগিত করে আহমেদ আল শারাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করার জন্য মন্ত্রিসভা গঠনের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে সিরিয়ার বর্তমান এই ডি ফ্যাক্টো নেতাকে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে সিরিয়ায় রাজনৈতিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার জন্য আল-শারাকে একটি অস্থায়ী আইন পরিষদ গঠনের ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। নতুন একটি সংবিধান গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত এ আইন পরিষদ নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাবে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে শারা বলেন, সিরিয়ার সরকার ব্যবস্থায় বর্তমানে যে শূন্যতা চলছে, তা বৈধ এবং আইনানুগভাবে পূরণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার আসার পথকে সুগম করা এবং সে জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে আমূল সংস্কারের প্রয়োজন। এসব সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের আয়োজন করতে ৪ বছর কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে বলে ভাষণে উল্লেখ করেছেন তিনি।
শারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সিরিয়ার জন্য নতুন সংবিধান গ্রহণ করা হবে এবং শুধু এই সংবিধান লিখতেই সময় লাগবে ৩ বছর।
সিরিয়ার কার্যত নতুন সরকারের সামরিক পরিচালনা খাতের মুখপাত্র হাসান আবদেল গনি ওই ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির বিদ্যমান সশস্ত্র বাহিনীগুলোর বিলুপ্তিও ঘোষণা করেন তিনি।
মুখপাত্র গনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী বিলুপ্ত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তা একীভূত করা হয়েছে।’
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাও বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করেছেন আবদেল গনি। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদের বাথ পার্টি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আসাদ পরিবার কয়েক দশক ধরে সিরিয়া শাসন করেছে।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি বৈঠকে এসব ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব গোষ্ঠীই ঝোড়ো আক্রমণ চালিয়ে বাশার আল-আসাদকে গত বছরের ডিসেম্বরের ৮ তারিখে উৎখাত করে। এ সময় তিনি দেশে ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে ছিল আল-শারার দল হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)।
সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করার পর থেকে দেশটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আল-শারা। পাশাপাশি তাঁর দল হায়াত তাহরির আল-শারা কার্যত সিরিয়ার শাসক দলে পরিণত হয়েছে।
আল-শারা আগেই জাতীয় সম্মেলন আয়োজন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন ও চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে চার বছর সময় লাগবে।
দামেস্ক থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা ওসামা বিন জাভিদ বলেন, গতকালের ঘোষণা সিরিয়ার ভবিষ্যতের চলার পথকে আরও স্পষ্ট করেছে।
জাভিদ আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার জন্য এই প্রশাসন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কত দিন থাকবে, তা আমরা জানি না।’
আহমেদ আল শারার পুরো নাম আহমেদ হুসাইন আল শারা। ১৯৮২ সালে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তখন তাঁর বাবা সেখানে পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সালে তার পরিবার সিরিয়ায় ফিরে আসে এবং দামেস্কের অদূরে বসতি স্থাপন করে।
দামেস্কে থাকাকালে শারা কী করতেন, তা জানা যায় না। ২০০৩ সালে সিরিয়া থেকে ইরাকে এসে তিনি আল-কায়েদায় যোগ দেন। এই বছরই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। তখন থেকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ‘আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি’ ছদ্মনাম নিয়েছিলেন শারা।
২০১৬ সালে আল কায়েদা থেকে বেরিয়ে আসেন শারা। আল কায়দার অন্যতম ব্রিগেড নুসরা ফ্রন্টের একাংশও তার সঙ্গী হয়। ২০১৭ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠী জাভাত ফাতেহ আল শাম গঠন করেন তিনি। পরে নাম পরিবর্তন করে ওই গোষ্ঠীর নাম রাখা হয় হায়াত তাহরির আল শামস বা এইচটিএস। এই গোষ্ঠীটির নেতৃত্বেই এক ছাতার নিচে এসেছিলেন বাশার আল আসাদের পতন অভিযানে সক্রিয় সব দল ও গোষ্ঠী।