■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনের হাসপাতালে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফ্লাইটটি সকাল ৮টায় অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী একই দিন রাত ৯টার দিকে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। তবে, খালেদা জিয়ার মেডিকেল টিমের মূল্যায়ন এবং প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে সময়সূচি পরিবর্তিত হতে পারে।
কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জার্মানি ভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বোমবার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০৪ মডেলের একটি বিজনেস জেট যা দীর্ঘ দূরত্বের মেডিকেল ইভাকুয়েশনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। চ্যালেঞ্জার ৬০৪ তার শক্তিশালী ট্রান্সকন্টিনেন্টাল সক্ষমতার জন্য পরিচিত
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার ভালো
খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। রোববার এসব পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। এতে তাঁর ‘স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার’ ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে তাঁর চিকিৎসক জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করে এক চিকিৎসক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার ভালো কাজ করছে। উনার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান শয্যার পাশে থেকে চিকিৎসার বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন। তিনি বেশ কয়েক দিন দেশেই থাকবেন।’
খালেদা জিয়া কথা বলতে পারছেন কি না—জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘কিছুটা বলার চেষ্টা করছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। উনার ছোট ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই পুত্রবধূ সার্বক্ষণিক পাশে আছেন। তাঁদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন।’
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান সম্পন্ন হয়েছে। রিপোর্ট স্বাভাবিক এসেছে বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড।
এর আগে জানানো হয়েছিল, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘স্টেবল’ (অপরিবর্তিত) রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে তাকে দেওয়া ওষুধ তিনি নিতে পারছেন।
১৫ দিন ধরে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটি কিছুটা উন্নতির দিকে। হৃদ্যন্ত্রে জটিলতাও কিছুটা কমেছে। তবে অন্য সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন সফরসঙ্গী লন্ডনে যাবেন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ আনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দীন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
আরও থাকবেন হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ শামীন মাহফুজ, মো. আব্দুল হাই মল্লিক, মো. মাসুদার রহমান, ফাতেমা বেগম ও রূপা শিকদার।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সঙ্গে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসা চলছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই দিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে, হাসপাতালের আশপাশে ভিড় ঠেকাতে ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
