নিউইয়র্কে আখতারের ওপর আওয়ামী কর্মীদের ডিম নিক্ষেপ

■ নিউইয়র্ক প্রতিনিধি ■ 

নিউইয়র্কে বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিনিধি দলের সদস্য জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করে লাঞ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে।

আখতার হোসেনকে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে নিউইয়র্ক পুলিশ আটক করেছে। আটক ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী বলে জানা যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটসের একটি ফ্লাইট নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কিছুটা বিলম্বে বিমানবন্দর থেকে বের হলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির; এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারাকে ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং কয়েকজন বিএনপির কর্মী তাদের নিরাপত্তা দিয়ে বের করার চেষ্টা করেন। এ সময় আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়েন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন কর্মী। তাসনীম জারাকেও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন তারা। 

প্রতিবাদে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান তোলেন আখতার। পরে পুলিশের সহযোগিতায় গাড়িযোগে বিমানবন্দর এলাকা ছাড়েন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শী বিমানবন্দরের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পরপর দুটি ডিম ছোড়া হয়। এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের পিঠে ডিমগুলো লাগে। তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে হেঁটে যান।

সবাই গাড়িতে ওঠার পর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তাঁরা ‘জয় বাংলা’সহ অন্যান্য স্লোগান দেন। এ সময় নিউইয়র্ক পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।

স্থানীয় সময় বেলা একটা থেকে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের আট নম্বর টার্মিনালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা সমবেত হয়েছিলেন। তাঁরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন।

আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা সেই প্রজন্ম যারা হাসিনার গুলির সামনে মাথা নত করিনি, ভাঙা ডিমে কিছু যায় আসে না। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী সংগঠন।’

প্রধান উপদেষ্টার সরকারি সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পাঁচ রাজনৈতিক নেতা—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের; জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যোগ দেবেন জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নকিবুর রহমান।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গীরা ম্যানহাটানের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সেখানে প্রতিবাদ করার অনুমতি নিয়ে রেখেছে। সে অনুযায়ী সন্ধ্যায় তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ করেন। রাস্তার দুই পাশে পরস্পরবিরোধী স্লোগান দেয় এনসিপি ও আওয়ামী লীগ। সেখানে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের বিচার দাবি করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। তিনি আগামী ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ আবারও প্রমাণ করল অন্যায়ের জন্য তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে ডিম ছোড়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে পোস্টে মির্জা ফখরুল লিখেছেন, ‘নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে যা ঘটেছে, তা আবারও প্রমাণ করল, আওয়ামী লীগ তাদের অন্যায়ের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করে না।’

মির্জা ফখরুল আরও লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত যা অন্যায় করেছে, সবকিছুর বিচার আইনের মাধ্যমে হবে। দল ও দেশের স্বার্থে ধৈর্য ধরুন।’

নিউইয়র্কে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ

নিউইয়র্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আখতার হোসেন ও তাসনিম জারাসহ রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ আক্রমণটি ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সহযোগী ও সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয় করেছিল। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে ভিভিআইপি গেট ও সুরক্ষিত পরিবহণের ব্যবস্থা করা হলেও শেষ মুহূর্তে ভিসা জটিলতার কারণে পথ পরিবর্তন করতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ভিভিআইপি নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে, যার ফলে প্রতিনিধিদল ঝুঁকির মুখে পড়ে। ঘটনার পরপরই অন্তর্বর্তী সরকার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে দ্রুত নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) সঙ্গে যোগাযোগ করে। একজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে ও বর্তমানে আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলছে। এই ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলের নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশে ও বিদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের প্রতি তার অটল অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের নিন্দনীয় কাজ সহ্য করা হবে না ও এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি এবং কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার জন্য তার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

নিউইয়র্কে হামলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি আছে

নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ অন্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি আছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

নাহিদ বলেন, আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। বরং এর আগেও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমসহ অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিকে দেশের ভেতর ও বাইরে হেনস্তা করা হয়েছে। আর এসব ঘটনার পেছনে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই জড়িত আছে।

তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই ক্রমাগত হামলা চলছে, সরকার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। এই ঘটনার সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন জড়িত, তারা তথ্য দেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি আছে, তাদের কাছে আমরা জবাবদিহিতা চাই।

এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি থামাতে নিউইয়র্ক কনস্যুলেট জেনারেলের পদত্যাগসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিবাদের দোষরদের খুঁজে বের করার দাবি জানান নাহিদ ইসলাম।

এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক সাক্ষাৎকারের বিষয় টেনে নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের রাজনীতি করলে বিএনপির জন্য তা কাল হয়ে দাঁড়াবে। বিএনপিকে বলব, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের রাজনীতি থেকে সরে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের রাজনীতি করুন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এনসিপির দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা পাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করলেও নাহিদ ইসলাম বলেন, এখনো শাপলা প্রতীক পাওয়ার প্রত্যাশা করে তার দল।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *