■ রাজশাহী প্রতিনিধি ■
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন হত্যা মামলার ১০৫ জন আাসমির সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। রোববার (১২) দুপুরে রাজশাহী মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক জুলফিকার উল্লাহ এই রায় দেন।
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আলী আশরাফ মাসুম জানান, এই মামলার বিচার চলাকালে ৯ জন মারা যান। আদালত ১০৫ জনের বিচার করেছে। তার ভাষ্য- সেদিনের ঘটনায় যেসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সরাসরি ভিকটিম ছিলেন তারা সাক্ষ্য দেওয়ার সময় কোনো আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন। একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরও একটি মামলা চলমান ছিল। সম্প্রতি সেই মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ মাসুম বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।’
তিনি জানান, মামলার ১১৪ জন আসামির মধ্যে ৯ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ১০৫ জন জীবিত আছেন। রায় ঘোষণার সময় ২৫ আসামি উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে- ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের কর্মী ফারুকের মরদেহ শাহ মখদুম হলের পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধারে পুলিশ। এ ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেন। মামলায় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন কেন্দ্রীয় আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ শিবিরের ৩৫ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেক শিবির নেতাকর্মীসহ মোট ১১৪ জনকে আসামি করা হয়।
২০১২ সালের ৩০ জুলাই ফারুক হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ২০১৯ সালে চার্জ গঠন করা হয়। এরপর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, সাক্ষ্য, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ রোববার (১২ অক্টোবর) রাজশাহীর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত সকল আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। রায় ঘোষণার সময় ২৫ আসামি উপস্থিত ছিলেন।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে হল দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ হয়। এতে ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেন নিহত হন। তার লাশ ম্যানহোলে পাওয়া যায়।
ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু বাদী হয়ে ৩৫ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে মহানগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর প্রায় আড়াই বছর পর ২০১২ সালের ২৮ জুলাই পুলিশ আদালতে ১ হাজার ২৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা ছাড়াও রাবি ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, সম্পাদক মোবারক হোসেন, নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসমত আলী, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সভাপতি রাইজুল ইসলামসহ ১১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন পর অবশেষে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ মাসুম বলেন, রায়ে খুশি-অখুশি এখনই বলা যাবে না। আগে রায়টা দেখি, তারপর। তবে মামলাটা করার সময় প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে রাজনৈতিক কারণে অন্যদের আসামি করা হয়েছিল।