■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আরও চার কমিশনারকেও নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এর মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হলো।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এসব নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে এ এম এম নাসির উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেছিল বিএনপি।
সিইসি পদে বিএনপির দেওয়া তালিকায় আরেকটি নাম ছিল—শফিকুল ইসলাম। বিএনপি চলতি মাসের শুরুতে অনুসন্ধান কমিটির কাছে এ তালিকা দিয়েছিল।
বিএনপির মিত্রদলগুলোর বেশির ভাগের তালিকাতেও এ দুই নাম ছিল।
চার কমিশনার হলেন-
১. মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত)
২. আবদুর রহমানেল মাসুদ, জেলা ও দায়রা জজ (অবসরপ্রাপ্ত)
৩. বেগম তাহমিদা আহমেদ, যুগ্ম সচিব (অবসরপ্রাপ্ত)
৪. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ (অবসরপ্রাপ্ত)।
এর আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এই পদে যোগ্য ব্যক্তির নাম খুঁজতে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ছয় সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটির আহ্বায়ক হলেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।
সার্চ কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান। রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক সদস্য হলেন- বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী পদাধিকারবলে সদস্য হিসেবে আছেন বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম।
বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা নতুন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন ২০০৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার সন্তান নাসির উদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে।
শহিদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ১৮ বছর ধরে ভোটাধিকারের জন্য ‘যুদ্ধ’ করার মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ‘শহিদ ও আহতদের’ রক্তের সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন বেইমানি করবে না। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
৭১ বছর বয়সী নাসির উদ্দীন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে অফিসিয়াল রিয়েকশন দেওয়া যাবে। এ দায়িত্ব যখন এসেছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়ে।
পার্টিকুলারলি, বিশাল একটা অভ্যুত্থানের পরে এত প্রাণহানি, রক্ত দেওয়ার পরে… এত লোক পঙ্গু হল, আহত হল; এরপর তারা ভোটের অধিকারের জন্য এতদিন ধরে, ১৮ বছর ধরে যুদ্ধ করছে। তাদের রক্তের সঙ্গে তো আমরা বেইমানী করতে পারব না।
অবাধ নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন নাসির উদ্দীন, যিনি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তিনি বলেন, একটা ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশনের জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তা করব ইনশাআল্লাহ।