■ শাহরিয়ার হক মজুমদার শিমূল ■
জুলাইয়ের প্রিয় সহযোদ্ধাবৃন্দ,
সালাম ও শুভেচ্ছা জানবেন। আপনাদের নিয়ে সাম্প্রতিককালের নানা আলোচনা, সমালোচনা, ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা জল্পনার প্রেক্ষাপটে এই চিঠিটি লিখছি।
আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা জুলাইয়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেকারণে আপনাদের প্রতি দেশবাসীর মায়া, আবেগ, ভালবাসা, শ্রদ্ধার জায়গা আছে। কিন্তু গত কয়েক মাসের ব্যবধানে এই জায়গাটা কতোটা অটুট আছে, যাদের পাশে একসময় লাখো জনতা নেমে এসেছে সেই তাদেরকেই কেন প্রায় শূন্য দর্শকসারি নিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করতে হলো, কেন অনেকেই মনে করে জাশি জনশক্তি না পাঠালে আপনাদের প্রোগ্রাম ফ্লপ করে, এসব বিষয়ে বিবেচনার ভার আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
আপনারা নয়া বন্দোবস্ত নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু এই ‘নয়া’ বিষয়টা কী, কেউ জানে না। তবে আপনারা অনলাইনে প্রতিপক্ষকে যে ব্যক্তিগত পর্যায়ের হেনস্থায় লিপ্ত হচ্ছেন, সচিবালয়কেন্দ্রিক আপনাদের নামে যে অসংখ্য অভিযোগ, একটা এক মাস বয়সী দলের নামে চাঁদাবাজির যে অসংখ্য অভিযোগ, আপনাদের দলীয় খরচের বিষয়ে যে অসচ্ছতা, দুইদিন আগে যারা টাকার অভাবে হলে থেকে ছাত্রলীগ করতো তারা কিভাবে হঠাৎ জমিদারের নাতি হয়ে উঠলো, নয়া বন্দোবস্তে এসব প্রশ্নের জবাব আপনাদেরকে দিতে হবে। নাইলে আপনারা স্রেফ আরেকটা জাসদ, বাসদ, এবি পার্টি হয়ে উঠবেন। বিকল্প হবেন না।
আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা জুলাইয়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেকারণে আপনাদের প্রতি দেশবাসীর মায়া, আবেগ, ভালবাসা, শ্রদ্ধার জায়গা আছে। কিন্তু গত কয়েক মাসের ব্যবধানে এই জায়গাটা কতোটা অটুট আছে, যাদের পাশে একসময় লাখো জনতা নেমে এসেছে সেই তাদেরকেই কেন প্রায় শূন্য দর্শকসারি নিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করতে হলো, কেন অনেকেই মনে করে জাশি জনশক্তি না পাঠালে আপনাদের প্রোগ্রাম ফ্লপ করে, এসব বিষয়ে বিবেচনার ভার আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
আমরা গত কয়েক মাসে আপনাদেরকে ক্রমাগত আওয়ামী লীগের বিকল্প হয়ে উঠতে দেখেছি, আওয়ামী পুনর্বাসন করে দল গোছানোর তাড়না দেখেছি, নয়া বন্দোবস্ত নয়। জুলাইতে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার পর আগস্টেই আপনারা বাকি সবাইকে অস্বীকার করে একক ক্রেডিট দাবি করার রাজনীতি শুরু করেছেন। যেটা একাত্তরের পর আওয়ামী লীগ করেছিল। আপনারা গত ১৬ বছরের আমাদের লড়াইকে নিয়ে রীতিমতো ঠাট্রা মশকরা করেছেন। অথচ এই দেশের একটা বৃহৎ অংশ যখন আওয়ামী ফ্যা সি বাদ আর ভা র ত পন্থাকেই ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছিল, আমরা তখনও লড়াইটা করে গেছি। আমাদের ক্যারিয়ারের সমস্ত সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে আমরা বাংলাদেশের পক্ষে লড়াইটা করেছি। এটা আমার জীবনের সবচাইতে গৌরবময় অংশ। কিন্তু আপনারা সেই লড়াইকে অস্বীকার করেছেন। শুধুমাত্র সময়টা ১৬ বছর বলে?
আপনারা নয়া বন্দোবস্তের কথা বলেন। কিন্তু এই ‘নয়া’ বিষয়টা কী, কেউ জানে না। তবে আপনারা অনলাইনে প্রতিপক্ষকে যে ব্যক্তিগত পর্যায়ের হেনস্থায় লিপ্ত হচ্ছেন, সচিবালয়কেন্দ্রিক আপনাদের নামে যে অসংখ্য অভিযোগ, একটা এক মাস বয়সী দলের নামে চাঁদাবাজির যে অসংখ্য অভিযোগ, আপনাদের দলীয় খরচের বিষয়ে যে অসচ্ছতা, দুইদিন আগে যারা টাকার অভাবে হলে থেকে ছাত্রলীগ করতো তারা কিভাবে হঠাৎ জমিদারের নাতি হয়ে উঠলো, নয়া বন্দোবস্তে এসব প্রশ্নের জবাব আপনাদেরকে দিতে হবে। নাইলে আপনারা স্রেফ আরেকটা জাসদ, বাসদ, এবি পার্টি হয়ে উঠবেন। বিকল্প হবেন না।
সিরিয়ায় আসাদ আর তার পিতা মিলে ৫৩ বছর ক্ষমতায় ছিল। সেদনায়া কারাগারের যেই রাজবন্দী আসাদের বাবার আমলে কারাগারে ঢুকেছে, যে গত ২৪ বছরেও জানতে পারেনাই যে আসাদের বাবার মৃত্যু হয়েছে, আসাদের জালিমশাহীর পতনে তার কি কোন ভূমিকা নেই? বৃটিশ রাজের পতনে ফকির আন্দোলন, তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা, ফরায়েজি আন্দোলন, সিপাহী বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহের কোন ভূমিকা নেই? নাকি আন্দোলনটা হঠাৎ শুধু সাতচল্লিশেই হয়েছে? সকল দল মিলে আন্দোলন করেও এরশাদকে হটাতে ৯ বছর লেগেছে। আওয়ামীরা তো ৯৬-২০০১ সালেও ক্ষমতায় ছিল। এরপর কি তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে? কিন্তু এবার হয়েছে। কারণ, এবারের বিষয়টা কোন স্বাভাবিক বিষয় ছিল না। সেকারণেই এদেরকে হটাতে সময় লেগেছে। কিন্তু সেজন্য বাকি সবার ধারাবাহিক লড়াইকে অস্বীকার করে আপনি চব্বিশ নিয়ে নতুন চেতনা ব্যবসায় নামতে পারেন না।
প্রফেসর ইউনুস সাহেবের বয়স ৮৪ বছর। ট্রাম্পের বয়স ৭৮ বছর। জো বাইডেন তো বয়সের কারণে মাঝেমাঝে স্বাভাবিকত্ব হারাতেন, কথা আঁটকে যেতো, বয়স ছিল ৮২ বছর। পুতিনের বয়স ৭২। শি জিন পিংয়ের ৭১। আপনারা কি আমাদেরকে এদের চাইতেও উন্নত বানাবেন? তা যদি না পারেন, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের অসম্মান করেন কেন? সম্মান পেতে হলে সম্মান দিতে জানতে হয়। রাজনীতিতে বেয়াদবরা দীর্ঘমেয়াদে টিকে না।
একটা দল বন্ধু বানানোর আগেই এতো এতো শত্রু তৈরি করে, এটা আপনাদেরকে না দেখে বোঝা কঠিন। অথচ আমরা আপনাদেরকে শত্রু ভাবিনাই। এখনও ভাবতে চাই না। কিন্তু নিজেদের ভিশন, মিশন, গঠনতন্ত্র, ম্যাচিউরিটির বদলে আপনারা পড়ে থাকেন সারাক্ষণ ফেসবুকে হাইপ তোলা আর বিএনপি ব্যাশিং নিয়ে। ফেসবুকে কিছু উগ্র, বেয়াদবকে ইনভেস্ট করে অন্য দলের শুভাকাঙ্খীদেরও হেনস্থা করে শত্রু বানাচ্ছেন। আপনাদের কি মনে হয় বিএনপিকে ব্যাশিং করলেই আপনারা আরেকটা বিএনপি হয়ে যাবেন? আপনারা কি মনে করেন এটাই আপনাদের রাজনীতি?
আমরা প্রতিপক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগকে চাই না। কিন্তু রাজনীতিতে ভ্যাকুয়াম থাকে না। আপনারা যদি জায়গাটা নেয়ার যোগ্যতা না রাখেন, জায়গাটা অপূর্ণ থাকবেনা। আপনাদের নীতিগুলো পুনর্মূল্যায়ন করুন প্লিজ। আপনাদের মাঝে যারা সম্ভাবনাময়, মেধাবী, দেশকে নিয়ে ভাবে, তারা অঙ্কুরেই ঝড়ে পড়ুক, আমরাও তা চাই না। কিন্তু আপনারা প্রচন্ড ভুল পথে এগোচ্ছেন। আত্মোপলব্ধি জরুরি, ভুল থেকে ফিরে আসা জরুরি, ভুল নীতির পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। এই লেখাটাকে সমালোচনা নাকি পরামর্শ হিসেবে নিবেন, তা আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম। আপনাদের জন্য আবারও শুভকামনা।
ইতি,
শাহরিয়ার শিমূল
লেখক: কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রদল