■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়কের ব্যাপারে ইমিগ্রেশন বিভাগকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে বিজয় অবশ্য একা নন। তার সতীর্থ একাধিক ক্রিকেটারের ওপর অভিযোগ আনা হয়েছে। রাজশাহী ছাড়া আরও তিন ফ্র্যাঞ্চাইজির সদস্যদের ওপর রাখা হয়েছে কড়া নজরদারি।
বিজয় ছাড়াও রাজশাহীর ক্রিকেটারদের মাঝে ফিক্সিং সন্দেহে আছেন দলটির স্পিনার সোহাগ গাজী ও পেসার শফিউল ইসলাম। সবচেয়ে বেশি সন্দেহ ঢাকা ক্যাপিটালস দলের ক্রিকেটারদের ওপর। এই দলের অধিনায়ক থিসারা পেরেরাসহ শুভাম রাঞ্জানে, মোহর শেখ অন্তর, নাজমুল ইসলাম অপু, আলাউদ্দিন বাবু আছেন সন্দেহের তালিকায়। সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক আরিফুল হোসেন ও পেসার আল আমিন হোসেন এবং চট্টগ্রাম কিংসের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকেও সন্দেহের তালিকায় রেখেছে বিসিবি।
বিপিএলের একাদশ আসরে অন্তত আটটি ম্যাচে সন্দেহজনক পারফরম্যান্সের অভিযোগ উঠেছে। যেখানে জড়িত সন্দেহে নজরদারিতে আছেন চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলা ১০ ক্রিকেটার। এর মধ্যে নাম আছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা এনামুল হক বিজয়ও।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘জনাব এনামুল হকের ব্যাপারে ইমিগ্রেশন বিভাগকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে মতে ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়েছে।’
বিসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়ের ব্যাপারে ইমিগ্রেশন বিভাগকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে এটি সাময়িক, অভিযোগ প্রমাণিত না হলে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।’
দুর্নীতি দমন বিভাগ নেমেছে তদন্তে। সে তদন্ত চলাকালে আপৎকালীন সিদ্ধান্ত হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ করেছে বিসিবি। তবে তার ওপর আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হলে সেটা তুলে নেওয়া হবে শিগগিরই।
চলতি মৌসুমের শুরুতে দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন এনামুল। তবে দলের পারফর্ম্যান্সের নিম্নমুখী গ্রাফের কারণে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তাসকিন আহমেদের অধীনে খেলছে রাজশাহী। এখন আছে প্লে অফে খেলার পথেও।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ৫ টেস্ট, ৪৯ ওয়ানডে ও ২০ টি–টোয়েন্টি খেলা এনামুল এ বছরের বিপিএলের অন্যতম সেরা পারফরমার। ১২ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরিসহ ৩৯২ রান করেছেন, যা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ।
রাজশাহী ১২ ম্যাচের ৬টিতে জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ পর্ব শেষ করেছে। তবে প্লে–অফে খেলতে পারবে কি না তা নির্ভর করছে আজকের ঢাকা–খুলনা ম্যাচের ওপর।
ক্রিকবাজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহের তালিকায় থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজির হিসাবে সর্বোচ্চ ১২ জন ক্রিকেটার খেলছেন দুর্বার রাজশাহী এবং ঢাকা ক্যাপিটালসের জার্সিতে। এর বাইরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ৬ এবং চিটাগাং কিংসের ২ ক্রিকেটারকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সন্দেহজনক পারফরম্যান্সের তালিকায় আছে ৮টি ম্যাচ– ফরচুন বরিশাল-দুর্বার রাজশাহী (৬ জানুয়ারি), রংপুর রাইডার্স-ঢাকা ক্যাপিটালস (৭ জানুয়ারি), ঢাকা-সিলেট স্ট্রাইকার্স (১০ জানুয়ারি), রাজশাহী-ঢাকা (১২ জানুয়ারি), চিটাগাং কিংস-সিলেট (১৩ জানুয়ারি), বরিশাল-খুলনা টাইগার্স (২২ জানুয়ারি) ও চিটাগাং-সিলেট (দুই ম্যাচ)।
এই বিষয়ে তদন্ত করছে বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট (অ্যাকু)। তদন্ত চলমান থাকায় এই মুহূর্তে ফিক্সিং ইস্যুতে মন্তব্য করতে অনাগ্রহ দেখিয়ে ফারুক বলেছেন, ‘তদন্ত এখনও চলমান থাকায় আমাদের কিছু প্রোটোকল মেনে চলতে হয়। সে কারণে আমি আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে পারব না। পুরো তালিকা এবং যেসব ম্যাচ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেসব আমাদের নজরে আছে এবং সেসব নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।’
কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যদি তদন্তে কোনো কিছু (প্রমাণ) বেরিয়ে আসে, এরপর যে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে সবাই জানেন। আমি যদি সেরকম কিছু পাই, তাদের জীবন কঠিন করে তুলব, আমি কারও অপরাধের ছাড় দেবো না। সিদ্ধান্ত একটাই আসবে এবং সেটি সবার জন্যই প্রযোজ্য হবে। সেটি হবে দৃষ্টান্তমূলক।’
প্রসঙ্গত, এবারের বিপিএলের শুরু থেকেই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বকেয়া রাখা নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে দুর্বার রাজশাহী। নির্ধারিত সময়ে পারিশ্রমিক না পাওয়ায় ক্রিকেটাররা একদিন অনুশীলনও বয়কট করেন। এরই মাঝে বিজয়কে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে তাসকিন আহমেদকে সেই দায়িত্ব দেয় রাজশাহী। পরবর্তীতে আসে এই ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ আরও বেশ কয়েকটি দলের ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক পারফরম্যান্সের অভিযোগ।