বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন ভারতীয় সেনাপ্রধান

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সোমবার দিল্লিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন। 

ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, ‘যদি আপনারা (ঢাকা-দিল্লি) সম্পর্কের কথা বলেন, সেটা ওখানে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সম্ভব নয়। তবে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক একদম ঠিক আছে, সব মসৃণভাবে চলছে।’ 

ভারতীয় সেনাপ্রধান এমন এক সময় এ মন্তব্য করলেন যখন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের অনুমোদনহীন কাঁটাতারের বেড়া তৈরি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। 

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতাও অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিসাররাও এনডিসির জন্য যথারীতি সেখানে গেছেন, ওদিক থেকে কোনো সমস্যাই নেই। শুধু আমাদের যে যৌথ সামরিক মহড়া হওয়ার কথা ছিল, সেটা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেটাও অনুষ্ঠিত হবে।’ 

গত জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সোমবার আর্মি ডে’ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। 

ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, ‘নভেম্বরে ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে কথা হয়।’ আগে সামরিক ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে যে সমন্বয় ছিল তা এখনও রয়েছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। দেশটির খুব ছোট্ট একটি অংশ ছাড়া পুরো সীমান্তজুড়ে ভারত। আমাদের একসঙ্গেই থাকতে হবে, একে অপরকে বুঝতেও হবে। এমন কোনো কিছু করা উচিত না, যাতে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন তা তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেছেন, আমাদের (বাংলাদেশ) জন্য কৌশলগতভাবে ভারত গুরুত্বপূর্ণ। আর উল্টোটাও ঠিক। কৌশলগতভাবে বাংলাদেশ আমাদের (ভারতের) জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একইসঙ্গে থাকতে হবে। আর এটা বুঝতে হবে যে কোনো রকম বৈরিতা দেখালে সেটা কোনো পক্ষের স্বার্থের জন্যই ভালো হবে না।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। সম্প্রতি সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে সেই টানাপোড়েন আরও গভীর হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী মনে করেন, সম্পর্কে বিদ্বেষ কোনো পক্ষের জন্যই ভালো ফল আনবে না।

তিনি বলেছেন, কোনো ধরনের শত্রুতা দেশের স্বার্থের অনুকূল নয়। বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের বক্তব্য মনে করিয়ে বলেন, তিনি (জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান) বলেছেন— ‘কৌশলগত কারণে ভারত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দিল্লিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, আমরা প্রতিবেশী— আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে এবং একে অপরকে বুঝতে হবে। কোনো ধরনের শত্রুতা একে অপরের স্বার্থে ভালো নয়। আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো ‘সমস্যা নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক চমৎকার ও নিখুঁত। পরিবর্তনের সময় (আওয়ামী লীগ সরকারের পতন) থেকেই আমি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এমনকি গত ২৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সেও আমাদের কথা হয়েছে।

সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, ‘যৌথ সামরিক মহড়া যা চলছে, আপাতত পরিস্থিতির কারণে কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রেখেছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই মহড়াও চালানো হবে।’

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দিল্লিতে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছে। তবে এখনও কোনো জবাব আসেনি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে শতাধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *