:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আগামী বুধবার সারা দেশে সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অনলাইন-অফলাইন গণসংযোগ চলমান থাকবে।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন। সোমবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর শাহবাগ মোড় দিয়ে আবার যান চলাচল শুরু হয়।
রাত সাড়ে ৮টায় শাহবাগে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় নাহিদের পাশে ছিলেন আন্দোলনের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, মাহিন সরকার, রিফাত রশিদ প্রমুখ৷
নাহিদ ইসলাম বলেন, অর্ধবেলা নয়, এরপর আমরা সর্বাত্মক ব্লকেডের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। কালকে রাস্তা ব্লকেডের আওতামুক্ত থাকবে। বুধবার ৬৪ জেলায় কঠোর কর্মসূচির প্রস্তুতির জন্য মঙ্গলবার সারাদেশের প্রতিনিধি বৈঠিক এবং অনলাইনে-অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে। মঙ্গলবার বিকেলে অনলাইন ব্রিফিংয়ে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব। আর ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।
ছাত্র আন্দোলনের অপর সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, কোটাপ্রথার দিন শেষ, মেধাবীদের বাংলাদেশ। সারজিস শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কি কোটার প্রোডাক্ট নাকি? কোটার প্রতি আপনার এত দরদ কেন! স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে হলে কোটাপ্রথা বাতিল করে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। বাংলা ব্লকেড সফল হয়েছে, ৪০ জেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আগামী দুদিনে ৬৪ জেলায় কীভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হয়, তা দেখিয়ে দেবে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা আজকে মন্ত্রীর কথায় মর্মাহত হয়েছি। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের মধ্যে এনে আমাদের হাইকোর্ট দেখানো হচ্ছে, অন্ধকে হাইকোর্ট দেখানো হচ্ছে। আপনারা আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। আমরা ফিরে যাওয়ার জন্য রাজপথে আন্দোলনে নামি নাই। আমরা দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আপনারা দায়িত্বশীলরা সহজ বিষয়কে ঘোলা করছেন। আপনাদের জন্যই শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। আপনাদের ওপর আমরা আস্থা হারাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের যেকোনো ক্ষতির দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। কেউ আহত হলে অসুস্থ হলে তার দায়ভার আপনাদের ঘাড়ে বর্তাবে। আমরা রাস্তায় থাকবো আর আপনারা এসে রুমে বসে রায় দেবেন তা আমরা মেনে নেব না। অতি দ্রুত আপনারা আমাদের সঙ্গে সমন্বয় না করেন তাহলে বুঝব আপনারা ছাত্র সমাজের পালস বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আন্দোলনের আরেক অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আজকে মন্ত্রী বলেছেন হাইকোর্টের রায়ের ওপর তাদের কথা নেই। হাইকোর্টের রায়ই নাকি চূড়ান্ত। আমরা এমন রায় মানি না, এমন বক্তব্যকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে এই রায় বর্জন করে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এই দাবি আদায় করে নেবে।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির সূচনা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সোয়া ৪টা নাগাদ রাজধানীর কাঁটাবন, মিন্টু রোড, মৎস্যভবন, চানখারপুল, বাংলা মোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটে বাংলা ব্লকেড করেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে আশপাশের সড়কের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের ঘোষিত বর্তমান এক দফা দাবি হলো- সব গ্রেডে সব প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।
এ ছাড়া এক দফা দাবি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
এর আগে বিকেলে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শাহবাগ মোড়ের সড়ক অবরোধ করেছিলেন। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। এর অংশ হিসেবে শাহবাগ ও এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টেই সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরোধের কারণে শাহবাগসহ আশপাশের সব সড়কেই যান চলাচল বন্ধ ছিল। শাহবাগসহ বিভিন্ন মোড় অবরোধ করায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী৷
শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দেন৷ এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘মেধাবীরা দিচ্ছে ডাক, কোটাপ্রথা নিপাত যাক’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা’, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি। স্লোগানের পাশাপাশি চলে বক্তব্য, গান ও কবিতা আবৃত্তি। অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে আশপাশের সড়কগুলো ছেড়ে দিয়ে বড় বড় মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে আসেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী৷
দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম এই আন্দোলন যাতে দীর্ঘমেয়াদি না হয়। তাই এত দিন আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক কমিটি ঘোষণা করিনি। কিন্তু দাবি আদায় না হলে আমরা মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সারা দেশে প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা এই টিম গঠন করেছি।’ নাহিদ আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো রকম বাধা দেওয়া হলে বা হয়রানি করা হলে আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব।’