■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটার এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
রোববার মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। এর পরই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি দাবি করেছে, কয়েক মাসের লড়াইয়ের পর রোববার সকালে তারা দেশটির সামরিক বাহিনীর শেষ অবশিষ্ট সীমান্তঘাঁটি বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নম্বর ৫ দখল করেছে। এ ঘাঁটিটি মংডু শহরের বাইরে অবস্থিত।
জান্তার অবশিষ্ট সীমান্তঘাঁটি দখলের আগে এএ জানিয়েছে, আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর সরকার এবং তাদের মিত্র রোহিঙ্গা মিলিশিয়ারা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আর তারা তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সোমবার রাখাইনের গণমাধ্যম জানিয়েছে, মংডুর এ যুদ্ধের পরে প্রায় ৮০ জন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীসহ সরকারি বাহিনীর সেনাদের পাশাপাশি সামরিক অপারেশন কমান্ড ১৫-এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনকে গ্রেফতার করেছে আরাকান আর্মি।
আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাফ নদে আরাকান জলসীমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ যাতে নাফ নদ অতিক্রম করতে না পারে সেজন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
আরাকান আর্মি মে মাসের শেষের দিকে মংডু আক্রমণ শুরু করে। আর সীমান্তবর্তী এই শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে ছয় মাস সময় লাগল গোষ্ঠীটির।
ইরাবতী বলছে, আরাকান আর্মি এখন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের তিনটি শহরেরই নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করছে। এগুলো হচ্ছে— রাখাইন প্রদেশের মংডু ও বুথিডাং এবং চিন প্রদেশের পালেতোয়া। পালেতোয়ার সঙ্গে ভারতের সীমান্তও রয়েছে।
রাখাইনে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী একজন সামরিক বিশ্লেষক বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য পুনঃস্থাপন পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশে বসবাসকারী মানুষের দুর্দশা কমাতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে রাখাইনে ২০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন বলে জাতিসংঘ গত মাসে জানিয়েছে।
জান্তা বাহিনী এই প্রদেশের দিকে যাওয়ার রাস্তা ও নৌপথ অবরোধ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাসহ খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহেও বাধা দিয়েছে। ওই বিশ্লেষক আরও বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার রাখাইন প্রদেশের জটিল রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে চাইলে জাতিগত সেনাবাহিনীর (আরাকান আর্মি) সাথে অর্থপূর্ণ সংলাপে যুক্ত হতে হবে।
আরাকান আর্মি এখন দক্ষিণ রাখাইনের গয়া, তাউনগুপ এবং আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য লড়াই করছে বলেও জানিয়েছে ইরাবতী।
টেকনাফ সীমান্তে বসবাসকারীরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের রাখাইনের মংডুতে চলমান যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। গোলার শব্দে আতঙ্কে রয়েছেন এপারে টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা। রাখাইনে অধিকাংশ জায়গা আরকান আর্মির দখলে ছিল। তবে মংডু শহরের কিছু অংশ জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেটির কারণে যুদ্ধ চলছিল দুই পক্ষে। ইতোমধ্যে সেটিও আরকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
‘নাফ নদে আরাকান আর্মির নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জেনেছি’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের চট্টগ্রাম মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সোয়াইব বিকাশ বলেন, ‘বাংলাদেশ জলসীমানায় আমরা কাউকে ঢুকতে দেব না। জালিয়ার দ্বীপ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত নাফ নদ ও সাগরে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। পাশাপাশি জেলেদের জলসীমা অতিক্রম না করতে বলা হচ্ছে।’