■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর নওরতন কলোনি থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে এবং সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে মাহবুব আলীকে আটক করা করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় মো. মাহবুব আলীকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, আসাদুজ্জামান নূর মিরপুর থানার একটি মামলার এজাহার নামীয় আসামি দেখানো হয়েছে।
মাহবুব আলীর বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায়। তিনি ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবার সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি বিমান প্রতিমন্ত্রী হন। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয়। তবে নির্বাচনে তাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার সুমন।
অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে নিজ, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে।
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অর্থপাচার, প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার নিজ নামে, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সাবেক এ সংসদ সদস্য তার আত্মীয়-স্বজনের নামে সিন্ডিকেট তৈরিপূর্বক এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে ঢাকায় সম্পদ অর্জন করেন। এ ছাড়া তার দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট।
আসাদুজ্জামান নূর শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।
আসাদুজ্জামান নূর রাজনীতির পাশাপাশি ১১০টিরও বেশি টেলিভিশন চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫), অয়োময় (১৯৮৮), কোথাও কেউ নেই (১৯৯০), আজ রবিবার (১৯৯৯) ও সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড (১৯৯৯)। রেডিওতে প্রচারিত তার নাটকের সংখ্যা ৫০-এরও অধিক। টেলিভিশনের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২) ও আগুনের পরশমণি (১৯৯৪)।
১৯৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে তিনি নীলফামারী কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।