:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় গাইবান্ধা থেকে সঞ্জয় পাল জয় নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ভোরে গাইবান্ধা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতার সঞ্জয় পাল জয় গাইবান্ধা শহরের সরকারপাড়ার রঞ্জিত পালের ছেলে।
ওসি মাসুদ রানা জানান, ঢাকা মেডিকেলে হামলায় জড়িত থাকায় সঞ্জয় পাল জয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। তাকে ঢাকায় সোর্পদ করা হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল রোববার সকাল থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (কর্মবিরতি) পালন করেন দেশের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। হামলাকারীদের গ্রেফতার-বিচার, নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। পরে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে কর্মবিরতি স্থগিত করে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কাজে ফেরেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলাম দিপ্ত (২৫) চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে চিকিৎসকদের মারধর করা হয়। মারধরের ঘটনায় শনিবার বিকেল থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আহসানুল গাইবান্ধা সদরের শহিদুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
ওই শিক্ষার্থী গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে তাঁর এক বন্ধুকে বিমানবন্দরে নামিয়ে দিয়ে মিরপুরে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শনিবার তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদিন সকালে তিনি মারা যান।
নিহতের বড় বোন সানজিদা আফরিন বলেন, আমার ভাই মোটরসাইকেল চালিয়ে কুর্মিটোলা যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। পরে শনিবার দুপুরের দিকে খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসে জানতে পারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকালের দিকে আমার ভাই মারা গেছে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর রাতে একই হাসপাতালে সন্ত্রাসীরা ঢুকে একজন রোগীকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা চিকিৎসকদেরও মারধর করে।
হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাসে সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সঙ্গে আলোচনার পর রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা এ ঘোষণা দেন।
এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম হামলার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার অঙ্গীকার করে চিকিৎসকদের দেওয়া কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। পরে পৌনে চারটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি পরিচালকের কক্ষে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কও তাতে যোগ দেন।
বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, যে কোনো জায়গায় কিছু হলেই চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয়। এটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। আপনাদের কথা শুনতে এসেছি। আমিও সমব্যথী। আমি আপনাদের মায়ের মতো, মায়ের কাছে কিছু লুকাতে নেই। আপনারা বলেন, আমি স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার করতে চাই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানের কক্ষে এই বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহও অংশ নেন।