নুরের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকার রমনা থানায় এ মামলার আবেদন করেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান সম্রাট মাঝি।

মামলার এজাহারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দীন মিলনসহ ১৮ জন। এছাড়া অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনাটি রমনা থানায় ঘটেনি। তারপরও মামলার আবেদনটি নেওয়া হয়েছে। আবেদনটি পর্যালোচনার পাশাপাশি ঘটনার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও আবেদনটি পাঠানো হয়েছে। সবকিছু পর্যালোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আখতারুজ্জামান সম্রাট জানান, মামলার আবেদনটি এজাহার হিসেবে রমনা মডেল থানার ওসির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এজাহারটি তিনি গ্রহণ করেছেন। যাচাই-বাছাই করে মামলাটি রেকর্ড করবেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগস্ট রাতে বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করলে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় নুরকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকদের পরামর্শে রাত ১১টার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

নুরুল হক নুরকে মারধরের ঘটনাটি দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। বিএনপি-জামায়াতসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল এ ঘটনায় নিন্দা জানায়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা তার চিকিৎসার খোঁজ নেন। প্রধান উপদেষ্টা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিশনও গঠন করা হয়েছে। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদ ছাড়তে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার আশঙ্কা ছিল বিষয়টি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপি জানতেন- এমন অভিযোগ এনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

তিনি বলেন, যদি কেউ ভেবে থাকে অধিকার পরিষদের ওপর হামলা করে রক্ত ঝরিয়ে বেঁচে যাবে তাহলে তা ভুল ভাবছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর সংলগ্ন মোড়ে জুলাই মঞ্চের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই জনতার সমাবেশে’ তিনি এ আল্টিমেটাম দেন।

সমাবেশ থেকে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি গত ২৯ আগস্ট নুরুল হক নুরের ওপর যৌথ বাহিনীর হামলার বিচার, লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের নিরাপত্তা ব্যর্থতার জবাবদিহিতা এবং শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

রাশেদ খান বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক নুরকে এভাবে নৃশংসভাবে আহত হতে হবে তা আমরা কেউ কল্পনা করিনি। দেশের বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও শিক্ষাখাত ও ছাত্র রাজনীতির কোনো পরিবর্তন আসেনি।

তিনি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এটি ভেঙে জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে আরেকটা ১/১১ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। যদিও আমাদের প্রত্যাশার শতভাগ পূরণ হয়নি, তবুও অন্তত গুম হওয়া বন্ধ হয়েছে, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু কমেছে, আমরা স্বাধীনভাবে সরকারের সমালোচনা করতে পারছি।

সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য রাখেন। শহীদ আবুল হোসেনের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, দেড় বছর পার হয়ে গেলেও আমি আমার স্বামীর লাশ পর্যন্ত দাফন করতে পারিনি। আমার সন্তানরা বড় হয়ে কীভাবে তাদের বাবার কবর জিয়ারত করবে?

শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কি করছে ইউনুস সরকার? এখনো শহীদদের তালিকা গেজেটভুক্ত করা হয়নি, পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমাদের সন্তানেরা কি বারবার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য প্রাণ দেবে?

এ সময় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, মেজর বজলুল হুদার ভাই ডিইক হুদা, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামানসহ জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *