■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
টানা দ্বিতীয়বার সাফের শিরোপা জিতে গৌরবের নতুন ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতল নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সাফ শিরোপা।
আগের ছয় আসরের পাঁচটিতেই ফাইনালে হারা নেপালের লক্ষ্য ছিল ইতিহাসের প্রথম শিরোপা জেতা। ষষ্ঠবারের মতো নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেও খালি হাতে বিদায় নিল হিমালয়কন্যারা।
গতকাল বুধবার নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ফাইনালে নেপালকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। খেলার দ্বিতীয়ার্ধেই হয়েছে তিনটি গোল। মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার এনে দেওয়া লিডের পর নেপালকে সমতায় ফেরান আমিশা কার্কি। এরপর জয়সূচক গোল আসে ঋতুপর্ণা চাকমার পা থেকে। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্ট ও ফাইনালসেরা হয়েছেন ঋতু। এ নিয়ে সব মিলিয়ে সাফে ৯ ম্যাচে অপরাজেয় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সেই স্বপ্নপূরণ করেই আজ দুপুর সোয়া দুটায় দেশে ফিরছেন বীরকন্যারা।
এর আগে নারী সাফের ফাইনাল নিশ্চিতের পর বাংলাদেশ ও নেপালের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের চাওয়া ছিল ফাইনালের মতো ফাইনাল।
নবম মিনিটে মারিয়া মান্ডার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে পড়েন ঋতুপর্ণা। নেপালি জটলার মধ্য থেকে অবশ্য গোল আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রতি আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণ কাঁপায় নেপাল। আতঙ্ক ছড়ান সাবিত্রা। তাকে আটকাতে রূপনা উঠে আসেন ওপরে। বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে না পারলে বল পেয়ে যান নেপালি ফরোয়ার্ড আমিশা। ফাঁকা গোলে শট নিলে এবার বারপোস্টে লাগায় গোলবঞ্চিত হয় নেপাল।
২৫ মিনিটে বাংলাদেশের বক্সে ফের আতঙ্ক ছড়ায় নেপাল। সরাসরি বক্সে নেওয়া লং থ্রো লাফিয়ে ধরতে চেষ্টা করেন রূপনা। বল পুরোপুরি গ্রিপ করতে ব্যর্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান বাংলাদেশি গোলরক্ষক। ডিফেন্ডারদের জটলার মধ্য থেকে ফাঁকা গোলের ফায়দা অবশ্য নিতে পারেনি নেপালি মেয়েরা। ২৮ মিনিটে সাবিত্রার দুর্দান্ত পাস থেকে প্রায় ফাঁকা জায়গা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন আমিশা। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ড্রয়ে।
বিরতির পরও আক্রমণ, প্রতি আক্রমণে জমে ওঠে খেলা। ডেডলক ভাঙে ম্যাচের ৫২তম মিনিটে। আক্রমণের সুর বেঁধে দেন সাবিনা; তহুরার পা ঘুরে বল যায় মনিকার কাছে। জটলার মধ্য থেকে আলতো টোকায় প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান এই মিডফিল্ডার। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে। তিন মিনিট পরই নেপালকে ১-১ সমতায় ফেরান আমিশা। প্রীতির থ্রু পাস বাংলাদেশের ডিফেন্স ভেদ করে বেরিয়ে গেলে রূপনাকে পরাস্ত করে বাংলাদেশের জাল কাঁপান আমিশা। ম্যাচে একাধিকবারই এই ফরোয়ার্ড বাংলাদেশের রক্ষণ কাঁপান। সাবিত্রাকে নিয়ে অতি সাবধানী বাংলাদেশের রক্ষণের সুযোগ নেন আমিশা। শেষ পর্যন্ত এই ফরোয়ার্ডই নেপালকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত গোল।
৬১ মিনিটে সাবিত্রার ভুলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। লং পাস পেয়ে অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড একাই এগিয়ে যান বল নিয়ে। তার গতির কাছে পরাস্ত হয় বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। আগুন্তুক গোলরক্ষক রূপনাও হন পরাস্ত; তবে সাবিত্রার কোনাকুনি শট যায় গোলের ডান পাশ ঘেঁষে। ৬৬ মিনিটে নেপালি মিডফিল্ডার প্রীতির বাড়ানো বলে রূপনা বরাবর শট নেন সবিতা রানা। ৬৮ মিনিটে মারিয়ার দূরপাল্লার শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফিস্ট করেন নেপালের গোলরক্ষক আঞ্জিলা তুম্বাপো সুব্বা। ম্যাচে পাওয়া চতুর্থ কর্নার থেকে সুবিধা আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭১ মিনিটে সাবিত্রার দূরপাল্লার আড়াআড়ি শট যায় বক্সের অনেকটা বাইরে দিয়ে।
৭৮ মিনিটে দারুণ সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। কয়েকজনকে কাটিয়ে বাম কর্নারের কাছ থেকে প্রতিপক্ষের বক্সে আড়াআড়ি ক্রস দেন ঋতু। কিন্তু গোলমুখ থেকে হেড নিতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। তবে দুই মিনিট পরই দলকে এগিয়ে দেন ঋতু। কর্নারের কাছে বাম প্রান্ত থেকে এই ফরোয়ার্ড আড়াআড়ি শট নেন গোলে। বাতাসে ভেসে ওই শটেই বল যায় নেপালের গোলরক্ষকের হাত ছুয়ে সরাসরি জালে। এবারের প্রতিযোগিতায় এটি ঋতুর দ্বিতীয় গোল। নির্ধারিত সময়ের ৮ মিনিট বাকি থাকতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-১ ব্যবধানে।
ওই গোলের পরই অধিনায়ক সাবিনাকে তুলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার স্বপ্নারানীকে বদলি হিসেবে নামান কোচ জেমস পিটার বাটলার। খেলার বাকি সময় চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি নেপাল। এ সময় বেশ কয়েকটি হাফ চান্স তৈরি করে বাংলাদেশ। রক্ষণে বেশি মনোযোগী বাংলাদেশও আর পায়নি গোলের দেখা। যদিও তা খুব জরুরিও ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের লিড ধরে রেখেই ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশের মেয়েরা।
একই ভেন্যু, একই প্রতিপক্ষ। পার্থক্য শুধু স্কোরলাইনে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ জিতেছিল ৩-১ ব্যবধানে, আর আজ ২-১। দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শিরোপা ধরে রাখার অতীত রেকর্ড নেই। ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশের পুরুষ দল আর শিরোপা জিততে পারেনি। নারী দল সেই দিক থেকেই রেকর্ডই করল। টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাবিনারা।
সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল দলকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় অভিনন্দন জানান তিনি।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের নারী ফুটবল দলের বিরাট অর্জন। আমি তোমাদেরকে নিয়ে গর্বিত। পুরো জাতি তোমাদের নিয়ে গর্বিত। অভিনন্দন সেসব খেলোয়াড়দের যারা আমাদের এই গৌরব এনে দিয়েছেন।
বুধবার দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালের হাজার হাজার দর্শককে স্তব্ধ করে টানা দ্বিতীয় বারের মতো নারীদের সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। ম্যাচে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়েছে সাবিনা খাতুনের দল। এর আগে ২০২২ সালেও নেপালকে হারিয়েই বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিল।
সাফ চ্যাম্পিয়নদের রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন
টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় তিনি অভিনন্দন জানান।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়, কোচ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং এই অর্জন বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল দলকে বিএনপির অভিনন্দন
সাফ নারী ফুটবলে নেপালকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেনবিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । বুধবার (৩০ অক্টোবর) এক বার্তার মাধ্যমে অভিনন্দন জানানো হয়।
অভিনন্দন বার্তায় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, দুই বছর আগে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল বাংলাদেশ। বুধবার নেপালকে আবার কাঁদিয়ে ২-১ গোলে জয়ী হয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা ধরে রেখেছেন লাল–সবুজের অদম্য মেয়েরা। এই বিজয়ে আমরা সবাই উচ্ছসিত, দেশের ফুটবলে যা নতুন এক ইতিহাস, বড় কোনো শিরোপা জিতে সেটি ধরে রাখার কীর্তি অর্জন করেছেন সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে আমাদের মেয়েরা।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আশা করেন, তারা এই ফুটবলের শিরোপা অর্জন ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উত্তরোত্তর উন্নতি করবেন এবং বাংলাদেশের ফুটবলের গৌরব ফিরে আনতে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তার আরো গঠন মূলক ভূমিকা রাখবেন।