■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামে একটি স্থানীয় সংগঠন এই বিক্ষোভ আয়োজন করে। সেখানেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা। একইসঙ্গে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন ও ভারতে বাংলাদেশের অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনের পাশাপাশি কূটনৈতিক এবং অকূটনৈতিক সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করছে যে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে গতকাল বিকালে কলকাতার একটি হিন্দু সংগঠন ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ’ দ্বারা সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। সে সময় বিক্ষোভকারীদের একটি বড় দল আয়োজিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ থেকে সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সীমানায় পৌঁছায়। তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন দেয় এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা দাহ করে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হলেও ডেপুটি হাইকমিশনের সব সদস্যের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা জানায়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় বাংলাদেশ সরকার।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ, বাংলাদেশ সরকার যেকোনো ধরনের সহিংস কার্যকলাপের নিন্দা জানায়। একইসঙ্গে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন এবং ভারতে বাংলাদেশের অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনের পাশাপাশি কূটনৈতিক এবং অ-কূটনৈতিক সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় খুন হন চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।
জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে ওইদিন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সকাল ১১টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এরপরই কয়েকশ ইসকন সমর্থক আদালত চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা চিন্ময়কে বহনকারী প্রিজন ভ্যান প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।
পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলেও তারা পথ অবরোধ করে রাখেন। এ সময় প্রিজনভ্যানের চাকাও পাংচার করে দেওয়া হয়। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলিফকে আদালতের মূল ফটকের প্রবেশমুখের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের পাশের গলি থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের মধ্যে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে একজন হলেন বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শুভ কান্তি দাশ। আরেকজনের নাম জিয়া উদ্দিন ফাহিম। তিনি বাকলিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।
এছাড়া, রাজীব ভট্টাচার্য সুমন দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের এক নেতার অনুসারী এবং একটি শিপিং কোম্পানির কর্মচারী বলে জানা গেছে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কোতোয়ালী পুলিশের গ্রেফতার করা আটজনের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। অন্য সাতজন হলেন রুমিত দাশ, সুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ ও সনু মেথর।
সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।