■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চিঠিতে ইসি জানায়, এবারের রোডম্যাপে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ, সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, বিভিন্ন ম্যানুয়াল ও নির্দেশিকা প্রস্তুত, নির্বাচনী সরঞ্জামাদির ব্যবহার উপযোগী করা, পোস্টার ও পরিচয়পত্র মুদ্রণসহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে
একই সঙ্গে নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দ, জনবল নিয়োগ ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রচারণা চালাবে সে বিষয়েও করণীয় নির্ধারণ করেছে কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী:
খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে এনআইডি সেবা সহজীকরণের উদ্যোগও নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নতুন করে সুযোগ রাখা হয়েছে।
কমিশনের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টধারী প্রবাসীরাও ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ জন্য ইসির পক্ষ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। তবে ভুয়া বা জাল পাসপোর্টধারীদের বিষয়ে সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও ভোটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের ভোটাধিকার আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। রোডম্যাপের খসড়া অনুমোদন পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করবে ইসি।
সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল, এরমধ্যে ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৬১ হাজারের বেশি।
এবার পৌনে ১৩ কোটি ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ কত হবে তা খসড়া তালিকা হলে সেপ্টেম্বরে জানা যাবে।
ইসির কর্মকর্তারা বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আসনভিত্তিক চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করবে ইসি। এরপরও কোনো ভোটকেন্দ্র কারো দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে মনে করলে কমিশন তা পরিবর্তন করতে পারবে।
ফেব্রুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা বলেছে ইসি। এরইমধ্যে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। এবার ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা না বাড়িয়ে ভোটকক্ষ প্রতি ভোটার সংখ্যা সমন্বয় করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে এর আগে বলেছিলেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ।