ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফশিল

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজান শুরুর আগেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ঘোষণা করা হতে পারে।

বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা শেষে এ কথা বলে বলেন নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচন প্রক্রিয়াকে এআই ও ড্রোন প্রভাবিত করতে পারবে না উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য এবং বিদ্বেষ ছড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে আচরণবিধিতে নির্দিষ্ট বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি শুধুমাত্র প্রার্থী ও দলের জন্য প্রযোজ্য হলেও, অন্যান্য পক্ষকেও মোকাবিলা করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন হলে নিজেরা ড্রোন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

ভোটের সময় সিসিটিভি ব্যবহার এখনো অনিশ্চিত উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে নির্বাচন কমিশন। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেশের ৪৫ হাজার কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন করা একটি ব্যয়বহুল ও জটিল প্রক্রিয়া। এত সংখ্যক ক্যামেরা কেনা বা ভাড়া করা কঠিন। এ বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে এবং তারা বিকল্প উপায় খুঁজছে। এর মধ্যে বিদ্যমান সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ব্যবহার করা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়ার মতো প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ১৮ থেকে ২০ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি আরপিও সংশোধনের ফলে, যা উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে, তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কমিশন সভা বসে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে তার সভাকক্ষে সভা শুরু হয়। সভায় চার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরপিওর সংশোধন প্রস্তাবের মধ্যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশসহ একগুচ্ছ প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করা হয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এর আগে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা এবং আরপিও সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করে ইসি। আচরণ বিধিমালার বিষয়ে ইসির আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে লিখিত মতামত দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া গত ১০ জুলাই অষ্টম কমিশন সভায় আরপিও সংশোধনী চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও সময়াভাবে সেদিন বিষয়টি আলোচনায় আসেনি।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, নতুন দল নিবন্ধন, নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা, ব্যালট পেপার প্রস্তুত করাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।

আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। 

এর আগে চলতি বছরের শুরুতে দোসরা মার্চে ভোটারদের তালিকা প্রকাশ করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেখানে ১২ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি ভোটার দেখা গেছে।

ভোটের আগে নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। ইতোমধ্যেই তারা ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বাগেরহাট ও গাজীপুরসহ তিন ডজনেরও বেশি এলাকায় পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আখতার আহমেদ বলেন, সীমানা নিয়ে আপত্তি থাকলে আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। এরপর শুনানি শেষে আগস্টের মধ্যেই সীমানা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

এছাড়া ইতোমধ্যে সীমানা আইন সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটার তালিকা সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা, স্থানীয় পর্যবেক্ষক নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম নীতিমালা, পর্যবেক্ষক সংস্থা নীতিমালা জারি ও আবেদন আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

আজ  এগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই করে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে কমিশনকে। কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ১৪৫টি দলের নিবন্ধন আবেদন তাদের কাছে জমা পড়েছে।

এর মধ্যে তথ্য ঘাটতি চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর ৮০টির মতো দল প্রয়োজনীয় নথি দিয়েছে। এছাড়া সময় বাড়াতে আবেদন করেছে ছয়টি দল। তফশিল ঘোষণার আগেই নতুন আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করে ভোটে অংশ নেওয়া দলের তালিকা প্রকাশ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

এর বাইরে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ ও প্রস্তুত করা, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা, ব্যালট পেপার প্রস্তুতসহ অন্যান্য কাজও চলছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আখতার আহমেদ বলেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব ধরনের নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা শেষ হবে। লোকাল পারচেজ প্রকিউরমেন্টে আটটি আইটেম ছিল। তার ভেতরে একটিতে পুনরায় দরপত্র দিতে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমাদের যে সময়সীমা রয়েছে, তার মধ্যে পাওয়া যাবে।

এছাড়া এবার ভোটে অনিয়ম বন্ধে এবার নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগে নতুন কৌশল নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগে।

কোথাও কোথাও জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *