■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রোববার (১৩ এপ্রিল) রিজার্ভ উঠেছে ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। যা গত সপ্তাহ শেষে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারির দায় বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধের পর গত ৯ মার্চ রিজার্ভ নেমেছিল ১৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে।
বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া ৩৭০ কোটি ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে আর বকেয়া রাখার সুযোগ দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে বিদেশি ঋণের সুদ যোগ হয়েও শেষ তিন মাসে প্রায় ৭৪ কোটি ডলার কমে গত ডিসেম্বর শেষে ১০ হাজার ৩৬৪ কোটি ডলারে নেমেছে। মূলত রপ্তানিতে প্রায় ২৮ শতাংশ এবং রপ্তানিতে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কারণেই এভাবে রিজার্ভ বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রোস রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৩৯ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। তবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখনো ১৬ বিলিয়নের ঘরে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বর্তমানে রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। আইএমএফের ঋণপ্রাপ্তির অন্যতম শর্ত ছিল নিট রিজার্ভ জুনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় থাকতে হবে। আশা করছি সংস্থাটির শর্ত জুনের মধ্যে পূরণ করতে সক্ষম হব।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৪ বিলিয়নের ডলারের নিচে নামে। সে সময় বৈদেশিক ঋণ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কেনার মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানো হয়। আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন গভর্নর এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। আবার বিভিন্ন উৎস থেকে ডলার যোগানের চেষ্টা করছে। তবে আগের দায় পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে কাছে ওঠানামা করছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮১-৮২ অর্থবছর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার।
পাঁচ বছর পর ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর শেষে সেই রিজার্ভ বেড়ে হয় ৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১৯৯১-৯২ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার অতিক্রম করে ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। পরের ১৯৯২-৯৩ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর শেষে। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর শেষে তা কমে ২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে তা আরও কমে ১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
এরপর ১৯৯৭-৯৮ থেকে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর পর্যন্ত রিজার্ভ দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে।
২০০০-০১ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। ওই অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার থাকলেও অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে তা ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। তখনই আকুর বিল পুরোটা পরিশোধ না করে অর্ধেক করা হয়েছিল।
২০০১-০২ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ বেড়ে হয় ১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।
২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। পরের বছর ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ২০১৬ সালের জুনে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চ শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। মহামারির এই সময়েই রিজার্ভ বেড়েছে সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার।
২০২০ সালের ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার হয়।
২০২০ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। তিন সপ্তাহ পর গত ১৭ আগস্ট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
২০২০ সালের মাত্র দেড় মাসে ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ ৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৩৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ছাড়ায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ৮ অক্টোবর ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। ২৯ অক্টোবর অতিক্রম করে ৪১ বিলিয়ন ডলার। ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ১৫ ডিসেম্বর।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৪৩ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে রিজার্ভ।
২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। একই বছরের ৪ মে আকুর ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।