■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে ৭ অক্টোবর ও ২৫ ফেব্রুয়ারিকে দুটি জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিবছর যথাক্রমে এই দুটি দিবস বিশেষভাবে পালিত হবে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকালে প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে জানানো হয়, শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে আগামীকাল ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকাসহ দেশের সব শিল্পকলা একাডেমিতে ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। ঢাকার প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন আবরার ফাহাদের বাবা।
এতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের জীবন ও তাদের সৃষ্টিকে উদযাপনের জন্য একটি ক্যালেন্ডার তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এ ক্যালেন্ডারে সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী ও বিডিআর হত্যাকাণ্ড দিবস অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ফলে এখন থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিবছর যথাক্রমে ৭ অক্টোবর ও ২৫ ফেব্রুয়ারি এই দুটি দিবস বিশেষভাবে পালিত হবে।
উল্লেখ্য, আবরার ফাহাদকে হত্যার ৬ বছর পূর্তি আগামীকাল ৭ অক্টোবর। তিনি বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন।
ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর মধ্যরাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাত ৩টার দিকে হলের দ্বিতীয় তলা থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ।
সেই ২০১১ নম্বর কক্ষটিকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করতো ছাত্রলীগ। সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই রুম থেকে নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্ট্যাম্প, রড, চাকু ও দড়ি উদ্ধার করেছিল ডিবি পুলিশ।
২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি ও গ্যাস চুক্তির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার।
ওই দিনই শেরেবাংলা হলের গেস্টরুমে আসামিরা সভা করে আবরারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
স্ট্যাটাসটি দেওয়ার সময় তিনি কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পর দিন (৬ অক্টোবর) বিকালে তিনি বাড়ি থেকে বুয়েটের হলে ফেরেন।
হলে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মাথায় রাত ৮টার দিকে আবরারসহ দ্বিতীয় বর্ষের সাত-আটজন ছাত্রকে শেরেবাংলা হলের দোতলার ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত-আটজন নেতা।
তারা আবরার ফাহাদের মোবাইল নিয়ে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখেন। এ সময় আবরার শিবিরের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ আনা হয়। আবরার এসব অস্বীকার করলে শুরু হয় স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতাকর্মী আসেন। তারা আরেক দফা পেটান আবরারকে।
মার খেয়ে একপর্যায়ে আবরার অচেতন হয়ে পড়লে কোলে করে মুন্নার কক্ষে (২০০৫ নং) নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মধ্যবর্তী জায়গায় অচেতন আবরারকে নিয়ে যান তারা। অচেতন আবরারের চিকিৎসার জন্য হল প্রভোস্ট ও চিকিৎসককে খবর দেয় ছাত্রলীগের সেসব কর্মী। কিন্তু এরই মধ্যে প্রাণ হারান আবরার।
চিকিৎসক এসে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়।
আবরার হত্যার ঘটনায় তার বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ২০ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এছাড়া এ মামলার অপর পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।