■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
জীবনরক্ষাকারী ৭৩৯টি ওষুধের দাম এখন থেকে সরকার নির্ধারণ করবে। একই সঙ্গে ১৯৯৪ সালে জারি করা একটি সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করে আদালত ১৯৯৩ সালের সরকারি গেজেট পুনর্বহাল করেছেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ওষুধ মালিক সমিতির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এস কে মোরশেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ এজাজ করিব।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ যুক্তি দেন, জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরাসরি মানুষের জীবনের অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকায় সাধারণ মানুষকে বেশি দামে ওষুধ কিনতে হয়, যা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে। বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির হাতে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা থাকার ফলে সাধারণ মানুষকে বেশি দামে কিনতে হয়।
রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আরও জানান, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ এর ১১ ধারায় সরকারকে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭৩৯টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি সার্কুলারের মাধ্যমে সেই ক্ষমতা সীমিত করে মাত্র ১৭৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখা হয়। বাকি সব ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে।
রায়ে আদালত সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদের আলোকে নির্দেশ দেন যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করারও নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে জীবনরক্ষকারী ওষুধের তালিকা করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। ওই তালিকায় যেসব ওষুধের নাম থাকবে সবগুলোর দাম সরকারকেই নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে এইচআরপিবি। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ আদালত রায় ঘোষণা করল। রায়ে আদালত বলেন, জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে এবং তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।
একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে।