■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশেও আজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না।
বিশ্বব্যাপী চলমান ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নিজ ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নর্থসাউথ ও ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ ক্যাম্পাস এলাকায় বিক্ষোভ করছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। গাজার জনগণের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, বসিলা ও উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে বিক্ষোভ করেছেন বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও। বিক্ষোভ হয়েছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেও। বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘স্টপ কিলিং ইন গাজা’সহ নানা স্লোগান দেন।
অনেককে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যেতে দেখা গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ (ঢামেক) বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেখানে বিক্ষোভ করছেন। বিভিন্ন সংগঠন আজ দিনভর সেখানে নানা কর্মসূচি পালন করবে।
আজ বেলা ১১টায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সায়েন্সল্যাব এলাকায় আসেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বিক্ষোভ মিছিলটি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে সায়েন্সল্যাব এলাকায় এসেছেন।
তারা বলেন, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় নির্মমভাবে মানুষকে হত্যা করছে। তাদের এই হত্যাযজ্ঞ দেখে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। আমরা এ গণহত্যা বন্ধ চাই।
বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘স্টপ কিলিং ইন গাজা’সহ নানা স্লোগান দেন।
এদিন সকাল ১১টায় রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিনটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি মিছিল সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে শুরু হয়ে বাটা সিগন্যালে গিয়ে শেষ হয়।
ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ও ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্র-জনতা। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ আজ সোমবার দিনভর এসব কর্মসূচি চলে।
আজ বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন স্কুল–কলেজ ও মেডিকেলের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জড়ো হন। ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র-জনতা এতে অংশ নেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। সেখানে বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা নার্সিং কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসেন।
বেলা ১টা নাগাদ টিএসসি এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন তাঁরা।
এদিকে আন্তর্জাতিক এই ধর্মঘটের প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সব দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রাখেন। পাশাপাশি এ দিনের সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে রাজধানীর আফতাবনগর এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন কলেজ–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘আমার ভাই শহীদ কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘ইসরায়েলের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ইসরায়েলের আগ্রাসন, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘বিশ্বের মুসলিম, এক হও এক হও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি রামপুরা, ওয়াপদা ও বাড্ডা সড়ক ঘুরে পুনরায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসে। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইসরায়েল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। আজকে তারা ফিলিস্তিনের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। পাঁচ থেকে দশ বছর পরে তারা বড় মুসলিম দেশগুলোকেও আক্রমণ করবে। অবিলম্বে নেতানিয়াহু প্রশাসনের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে রাজধানীর আফতাবনগরে বিক্ষোভ থেকে মুসলমান দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। আজ সোমবার বিকেলেছবি: জাহিদুল করিম
বিক্ষোভ ও সমাবেশে অংশ নেন আফতাবনগর, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মেরাদিয়া, ত্রিমোহনী, নন্দীপাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ লোকজন।
সমাবেশে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাকিব হাসান বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চাই না। ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর আর একটি বুলেট ও বোমা যেন আক্রমণ করতে না পারে, আমরা সেই নিশ্চয়তা চাই। ফিলিস্তিনের রক্তের ওপর ব্যবসা হচ্ছে। আমরা এটা বন্ধ চাই। মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইফতেখার হোসেন মাহি বলেন, ‘মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে আমরা ঘুম থেকে জেগে ওঠার আহ্বান জানাই। আজ যদি ফিলিস্তিন না থাকে তাহলে একদিন বড় মুসলিম দেশগুলোর ওপরও আক্রমণ হবে। বিশ্বের মোড়লেরা মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু তারা কৌশলে ধোঁকা দেয়। ইসরায়েলি বর্বরতা যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়, তাহলে মানবাধিকার বলতে আর কিছু থাকে না।’

বুয়েটে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বুয়েটেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বুয়েটের সব দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।
বেলা ১১টার দিকে বুয়েট ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।ছাত্র–জনতার বিক্ষোভে নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ‘এ ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিন ঘুরে দাঁড়াবে, সেই ঘুরে দাঁড়ানো এ উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের পতনের মধ্য দিয়ে সূচনা হবে। এ চিন্তা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের তরুণদের নিজেদের জীবনকে সাজাতে হবে।’
এদিকে বুয়েট প্রশাসনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার বুয়েটের সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিবাদ কর্মসূচি
গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আজ বিকেল ৫টার দিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ শীর্ষক ব্যানারে একটি বিক্ষোভ–মিছিল হয়। সমাবেশে এ সংগঠনের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যে মুক্তি অর্জন করেছে, সেই মুক্তির হাওয়া খুব শিগগির কাশ্মীর ও প্যালেস্টাইনে বইবে।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আগামীকাল দুপুর ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করেছে। এতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৭ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট, অফিস ও আদালত বন্ধ রাখা; ৮ এপ্রিল মহানগরব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ, ৯ এপ্রিল ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, ১০ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান, ১১ এপ্রিল জেলাপর্যায়ে গণ–আন্দোলন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি
‘আজাদ প্যালেস্টাইন’ নামক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন ছয় দফা দাবিতে মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ সংগঠনটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামীকাল বেলা সাড়ে ৩টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মিছিল করবে তারা। এ কর্মসূচিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবে বলেও জানায় তারা। সেখানে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হবে।
৬ দফা দাবি
গাজায় চলমান গণহত্যা ও মার্কিন সহায়তার রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে জবাবদিহির আওতায় আনা, পাসপোর্টে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ পুনঃস্থাপন, সব ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে বর্জন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসরায়েলের গোপন চুক্তি প্রকাশ ও আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা।
সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ দল-মত–নির্বিশেষে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে দেশের ইতিহাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে সর্ববৃহৎ গণজমায়েত গঠনের আহ্বান জানান।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’ এক বিবৃতিতে গাজায় গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানান এবং ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’ কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
তাঁরা বলেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারত্ব ও গণহত্যা মানবতার ইতিহাসে অন্যতম ঘৃণ্য অপরাধ। রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় হওয়া নৈতিক দায়িত্ব।’
ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কাছাকাছি কয়েকটি স্থানে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে এসব মিছিল শুরু হয়। বেলা পৌনে ২টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।
বেলা পৌনে ২টায় মার্কিন দূতাবাসের উল্টো দিকের পদচারী–সেতুর সামনে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সটির একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছিলেন। তাঁরা গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় হামলার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ’ ট্রাম্পের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘আমরা কারা, তোমরা কারা ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ বলে স্লোগান দেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে মার্কিন দূতাবাস এলাকায় মিছিল বের করেন একদল তরুণ। মার্কিন দূতাবাসের সামনে সড়কে অবস্থান নেন তাঁরা। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিছিলটির সামনে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।
আজ সকাল থেকে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ, ঢাকার শিক্ষার্থীরা মার্কিন দূতাবাসের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।
আজ সকাল থেকে মার্কিন দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেন সেনা সদস্যরা। তাঁরা একধরনের মানবপ্রাচীর তৈরি করেন। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া মানুষজনকে তল্লাশি করা হচ্ছিল।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান বেলা সোয়া একটার দিকে বলেন, সকাল ১০টার দিক থেকে ভাটারা থানা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। তখনো বিক্ষোভ চলছিল। ছোট ছোট দলে বিক্ষোভকারীরা এসে বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা আবার চলেও যাচ্ছেন।
মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকে ঘিরে দূতাবাস এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এলাকাটিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, এপিবিএন, এসবি, সিআইডি, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে গুলশান এলাকায় থাকা অন্য দূতাবাসগুলোতেও।
নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের গুলশান জোনের এসি আলী আহমেদ মাসুদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন অনেকে। সে জন্য এখানে দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, সিআইডি, এসবি, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ডিপ্লোমেটিক জোনের নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন।
গণহত্যা বন্ধ না হলে ইসরায়েলকে গুঁড়িয়ে দেওয়া উচিত মুসলমানদের
অবিলম্বে গাজায় নারী-শিশু হত্যাসহ ন্যাক্কারজনক হামলা বন্ধ করতে হবে। যদি না করা হয়, তাহলে বিশ্ব মুসলিম গাজার দিকে মার্চ করতে বাধ্য হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিম উম্মাহ ইসরায়েলকে বিশ্ব মানচিত্র থেকে গুঁড়িয়ে দেবে।
সোমবার বিকেল ৪টায় রাজধানীতে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ড. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর কাছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজাবাসী নারী ও শিশুকে হত্যা করে আইয়ামে জাহেলিয়াতের বর্বর যুগের ইতিহাসকে হার মানিয়েছে। ইসরায়েল গণহত্যা পরিচালনার মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলমানদের গুঁড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা শুধু ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করতে চাই না। পৃথিবীর বুকে যেখানেই ইহুদি থাকবে সেখানেই তাদের বয়কট করা হবে।
তরুণ যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্রশিবিরের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ হয়ে তৈরি হওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলকে বয়কট করে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাসী ইসরায়েলের কালো থাবা থেকে তাদের মুক্ত করতে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে চূড়ান্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি জাতিসংঘ ও ওআইসিকে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলকে বয়কট এবং জেনোসাইডের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
ইন্ধনদাতা-সমর্থন দেওয়া রাষ্ট্রগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এ জামায়াত নেতা বলেন, অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, হামলা বন্ধ করুন। যদি তা করা না হয়, তাহলে গোটা মুসলিম উম্মাহ দুর্বার বৈশ্বিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
বিক্ষোভ মিছিলে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মুসল্লিরা অংশ নেন।