■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা নদী ও মৌলভীবাজার জেলার মনু নদের পানি সমতল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা নদী, মনু ও খোয়াই নদের পানি সমতল আগামী ৪৮ ঘণ্টা বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এর পাশাপাশি সারি, গোয়াইন, যাদুকাটা, ধলাই ও সোমেশ্বরীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এসময়ে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নদ-নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এতে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ইত্যাদি নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, দ্বিতীয়য় দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী এক দিন হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে মুহুরী, ফেনী, হালদা সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের ও যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীগুলোর পানি সমতল আগামী ৪ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে বিপদসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী একদিন নদ-নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
এতে বলা হয়, গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে ও পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৫ দিন গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে অতি ভারী বর্ষণের কারণে সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুদিনের বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি ঘাগড়া এলাকায় কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সড়ক সচল রাখতে কাজ করছে সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। তবে কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পানিবন্দি মানুষের জন্য ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। উপজেলা সদরে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় বান্দরবানের লামার বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। লালমনিরহাটে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়েছে। এতে নদীর উভয় তীরে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, জুন মাসে বিচ্ছিন্নভাবে দেশে এক-দুটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
চলতি মাসে দেশে ৬ থেকে ৮ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বজ্রঝড় হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়।
দেশের কৃষি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। জুন ২০২৫ মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই মাসে ১-২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, ৬ থেকে ৮ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জুন মাসে দেশে ১-২টি বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬-৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮-৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
নদ-নদীর অবস্থা সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুন মাসে ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কৃষি আবহাওয়ার ক্ষেত্রে, এই মাসে দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ৩-৫ মিলিমিটার এবং গড় উজ্জ্বল সূর্যকিরণ ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা ঘণ্টা থাকতে পারে।
মে মাসের আবহাওয়া পর্যালোচনায় দেখা যায়, মে ২০২৫ মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬২.৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ২৪ মে কক্সবাজার উপকূল এবং ৩১ মে সারাদেশে বিস্তার লাভ করে।
মে মাসে রেকর্ডকৃত গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৮৬ মি.মি., যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৯৮ মি.মি.। এটি স্বাভাবিকের চেয়ে ৬২.৯ শতাংশ বেশি । বিভাগওয়ারী বৃষ্টিপাতের পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল।
মে মাসে দেশে ১-৬, ৮, ১১-২৭ তারিখে পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ুপ্রবাহের সংযোগ এবং ২৯-৩১ তারিখে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অনেক স্থানে মাঝারি থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৪০৫ মি.মি. সিলেটে রেকর্ড করা হয় গত ৩১ মে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এটি কৃষি খাত এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ চিন্তার কারণ। কৃষি আবহাওয়ার ক্ষেত্রে, এই মাসে দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ৩-৫ মিলিমিটার এবং গড় উজ্জ্বল সূর্যকিরণ ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা থাকতে পারে, যা ফসলের বৃদ্ধি ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই পূর্বাভাস দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুনে সম্ভাব্য নিম্নচাপ এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে। আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস কৃষি উৎপাদন, জনজীবন এবং সামগ্রিক পরিবেশের উপর কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
উষ্ণতম মাস হিসেবে এপ্রিলের পরই থাকে মে। আর এবার সেই মে মাসজুড়েই পুরো দেশ বৃষ্টিতে ভিজেছে। চলতি জুন মাসেও লঘুচাপ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।