■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
বিদায়ী নভেম্বর মাসে দেশে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে যার পরিমাণ ২৬ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা।
রোববার (১ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮২ কোটি ৪২ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২২ কোটি ৩১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাবাক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। আর বিদেশি খাতের মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
একক মাস হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছরের নভেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৩ কোটি ডলার। তার আগের বছর ২০২২ সালের নভেম্বরে এসেছিল ১৬০ কোটি ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসে দেশে ৮৯৩ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬৮৭ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার, অক্টোবরে এসেছে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার এবং সবশেষ নভেম্বরে এসেছে ২২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের টানা ৫ মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রবাসী আয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন বা এক হাজার ১১৪ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৩৩ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। একক মাস হিসেবে গত নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ২২০ কোটি ডলার। এভাবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক উন্নতি হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এক হাজার ৫৭৯ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে ডলার বাজারে অস্বস্তি কমতে শুরু করেছে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ডলারের দর ১২০ টাকায় স্থিতিশীল আছে। এর আগে আমদানিকারকদের যেখানে প্রতি ডলার ১২৫ টাকা পর্যন্ত কিনতে হচ্ছিল। এছাড়া গত নভেম্বর মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সেপ্টেম্বর–অক্টোবর সময়ের জন্য ১৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। এরপর রিজার্ভ কমে গত ১১ নভেম্বর ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। সেখান থেকে আবার বেড়ে ১৮ দশমিক ৭৪ বিলিয়নে উঠেছে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে।
এর আগে আওয়ামী সরকারকে অসহযোগিতার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠাতে ব্যাপক ক্যাম্পেইন চলছিল। আবার আন্দোলন দমনের জন্য তখন বেশ কয়েকদিন ব্যাংকসহ সব ধরনের অফিস বন্ধ রাখা হয়। এসব কারণে জুলাইতে রেমিট্যান্স কমে ১৯১ কোটি ডলারে নেমে যায়। এর আগে গত মে মাসে আইএমএফের পরামর্শে এক লাফে প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা করার পর থেকে রেমিট্যান্স দ্রুত বাড়ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স আসে দেশে।দেশীয় মুদ্রার যার পরিমাণ দুই লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
এর আগে দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স ২৬০ কোটি ডলার এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।