ফেব্রুয়ারির ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৬০০৯ কো‌টি টাকা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশে ১৩১ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৯ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি (২.১৯ বিলিয়ন ডলার) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আর অর্থবছরের হিসাবে গত আগস্ট থেকে টানা ৬ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৫ দিনে ১৩১ কোটি ২২ লাখ ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৬ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৮ কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭৫ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।

এ সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১১টি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক। এছাড়া বিদেশিখাতের ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।

চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে দেশে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৯১ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০৫ কোটি ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার এবং নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দা‌য়িত্ব নেওয়ার পর টানা ছয় মাস দুই বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এলো বাংলাদেশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বর ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে এসেছে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রারর রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্স অংক এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।

আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪ এর জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার, আগস্টে আসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে আসে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার, নভেম্বর মাসে আসে ১৯৩ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে আসে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে আসে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, মার্চ মাসে আসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, এপ্রিলে আসে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার এবং জুন মাসে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

২০২৩ সালে প্রবাসীরা ২ হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। ২০২২ সালে আসে দুই হাজার ১২৭ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০২০ সালে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

এর আগে দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স ২৬০ কোটি ডলার এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।

গণভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি ছিল। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিট্যান্স প্রবাহেও গতি ফেরে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার পতনের পর থেকে রেমিট্যান্সসহ বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হুন্ডি চাহিদা কমেছে। বাণিজ্যের আড়ালে কিম্বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ যারা দেশের বাইরে পাঠাতো তাদের বেশিরভাগই এখন দৌড়ের ওপরে আছে। ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন আমদানিতে কম মূল্য দেখিয়ে এলসি খোলার প্রবণতা কমেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অর্থ পাচারে কড়াকড়ি করছে সরকার। আবার ঋণ জালিয়াতি, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মে অভিযুক্ত ১০টি গ্রুপের অনিয়ম তদন্তে যৌথ টিম কাজ করছে। নতুন করে পাচারের সুযোগ তো দূরে থাক, উল্টো আগে পাচার করা অর্থ দেশে আনার চেষ্টা চলছে। এসব কারণে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *