■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এতে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪৫৯ জনে দাঁড়াল। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৭৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে ৯ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। এর মধ্যে ৫ জন উত্তর সিটির, ৪ জন দক্ষিণ সিটির। বাকি ২ জন খুলনা বিভাগের।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৯৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ২৭২ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৯৪ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১২১ জন, খুলনা বিভাগে ১৪৩ জন রয়েছেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৫৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৫ জন, রংপুর বিভাগে ১৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ৯ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ১২৩০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮২ হাজার ৬১২ জন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৮৬ হাজার ৭৯১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ জনের।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন; যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের এবং জুলাই মাসে ২৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১২ জনের। আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ জনে। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। এ সংখ্যা ১২ হাজার ৫৬৯। তবে ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের। এই বয়সী ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে।
এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ১৮৬ রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৭১ জনের।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।
দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।