■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশ ৫৬০ কোটি ৮১ লাখ ডলার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করেছে। তবে সেখান থেকে ফেরত দিতে হয়েছে ৩৭৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, যার পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ৬৭৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এই পরিশোধের মধ্যে সুদের অংশ ১৬ হাজার ৯১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা, আর মূল ঋণ পরিশোধ হয়েছে ২৮ হাজার ৭৫৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৩ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জুলাই-মে সময়ে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছিল ৩৩ হাজার ৮৯৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।
এই ঊর্ধ্বমুখী ঋণ পরিশোধের প্রবণতা শুধু এক বছরের মধ্যে ব্যতিক্রম নয়; বরং তা ক্রমবর্ধমান বোঝার চিত্র স্পষ্ট করছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধ হয়েছিল ২৬৭ কোটি ১৭ লাখ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২০১ কোটি ৭৯ লাখ ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৯১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশ ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও গ্রেস পিরিয়ড শেষে জমে ওঠা পরিশোধের দায় মিলিয়ে এই চাপ আরও বাড়তে পারে।
এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে ৫৬০ কোটি ৮১ লাখ ডলার পেয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। এর মধ্যে ঋণ বাবদ ছাড় হয়েছে ৫২২ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার, আর অনুদান এসেছে মাত্র ৩৭ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।
ঋণ প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রেও একই ধারা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মোট প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫৪৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৭৯২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার—কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক অস্থিরতা, ডলার-সংকট ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরা এখন নতুন প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়ে আরও বেশি সংযত।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েই চলছে। অর্থবছরের শেষে এসে এই চাপ আরও বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল বাবদ অর্থ পরিশোধ ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এযাবৎকালের মধ্যে সরকারকে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণ শোধের পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে রবিবার প্রকাশিত বিদেশি ঋণ পরিশোধসংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে ৩৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের পুরোটা সময়ে বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩৩৪ কোটি ডলার।
ইআরডির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছিল প্রায় ৩০৭ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ অর্থ পরিশোধের পরিমাণ ২৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সরকার এ বাবদ যে অর্থ ব্যয় করেছে, তার মধ্যে ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২৩৮ কোটি ডলার। ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৪০ কোটি ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সময়ে নেওয়া বড় বড় মেগা প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাজারভিত্তিক উচ্চ সুদহারের বিভিন্ন ঋণ গ্রহণও এতে প্রভাব ফেলেছে। কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতিবিদরাও বিদেশি ঋণ গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
এদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাড়লেও কমেছে বিদেশি ঋণছাড় ও ঋণের প্রতিশ্রুতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণছাড় হয়েছে ৫৬০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭০২ কোটি ডলার। একই সময়ে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫৪৮ কোটি ডলারের। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৭৯২ কোটি ডলারের।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে (সুদ ও আসল মিলিয়ে)। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধ করা হয়েছিল ৪৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন (৭ হাজার ৮১৮ কোটি) ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়বে আরও ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারেরও বেশি। পর্যায়ক্রমে এ ঋণ পরিশোধের চাপ সামনের বছরগুলোয় আরও বাড়বে। কেননা গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ যে গতিতে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে সুদ বাবদ খরচ। টাকার অবমূল্যায়নের ফলে বিদেশি ঋণের সুদের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের চাপও সামনে বাড়তে থাকবে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় দাতাদের সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে পরিশোধ করেছে ৩৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৩৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ। এর মধ্যে ২২ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা মূল ঋণ ও ১৪ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা সুদ রয়েছে। বহুপক্ষীয় দাতাসংস্থা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্থাটির অনুকূলে পরিশোধ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা।
রাশিয়ার এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ঋণের আসল এখনো পরিশোধ শুরু হয়নি। ২০২৭ সাল থেকে আসল পরিশোধের কথা থাকলেও সরকার আরও দুই বছর পেছানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আসল ও সুদসহ তখন বাংলাদেশকে প্রতিবছর প্রায় ৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে।
বিদেশি ঋণ পরিশোধে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বাংলাদেশ। তা দেখে উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে চাপ বাড়বে অর্থনীতিতে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন সময়ে দাতাদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করেছে সরকার।
পরিশোধের এই অঙ্ক গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। আর পুরো অর্থ বছরের চেয়ে ৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেশি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হতে এক মাস বাকি থাকতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রথম ১০ মাসের বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি, প্রাপ্তি, ও পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
তাতে দেখা যায়, এই ১০ মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ (৬.১৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ।
এই অঙ্ক গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১২ কোটি (১.১২ বিলিয়ন) ডলার কম। শতাংশ হিসাবে কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ।
গত অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে উন্নয়ান সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ (৬.২৮ বিলিয়ন) পেয়েছিল বাংলাদেশ।
অন্যদিকে গত ১০ মাসে বাংলাদেশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫ বিলিয়ন) ডলার; যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
গত অর্থ বছরের একই সময়ে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮১ কোটি ১৭ লাখ (২.৮১ বিলিয়ন) ডলার। আর অর্থ বছরের পুরো সময়ে ৩৩৭ কোটি (৩.৩৭ বিলিয়ন) ডলার শোধ করেছিল।
হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয় বিদেশি ঋণের পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলারের যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, তার মধ্যে ২২১ কোটি (২.২১ বিলিয়ন) ডলার শোধ করা হয়েছে আসল বাবদ। আর সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩০ কোটি (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে যে ২৮১ কোটি ১৭ লাখ (২.৮১ বিলিয়ন) ডলার শোধ করা হয়েছিল, তার মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার। আসল শোধে গিয়েছিল ১৬৬ কোটি ৩৭ লাখ (১.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা আছে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
টাকার হিসাবে ইআরডি বিদেশি ঋণ পরিশোধের যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের ১০ মাসেই তার ১৬ শতাংশ বেশি (৪২ হাজার ২৮২ কোটি ডলার) চলে গেছে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা করা হয়।
ডলারের দাম বাড়ায় টাকার অঙ্কে বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইআরডি’র কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ৮৬। অর্থাৎ এক ডলারের জন্য ১২২ টাকা ৮৬ খরচ করতে হয়েছে।
এক বছর আগে ২০২৪ সালের ২৩ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৭ টাকা ৮২ পয়সা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
১২ বছরে পরিশোধ বেড়েছে তিন গুণ।
বড় বড় প্রকল্পের বিদেশি ঋণ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন কয়েক বছর ধরেই।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। পরের ১০ বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা পৌনে তিনশ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে অঙ্কটি ৩৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়ার পর এবার ১০ মাসেই সাড়ে তিনশ ডলারে উঠেছে।
অর্থাৎ ১২ বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে।
কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। দুই বছর ধরে আরও বেশি বেড়েছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট চলছে।
বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে রিজার্ভ ও বাজেটে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
ইআরডি’র তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে যে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ (৫.১৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ১৪০ কোটি ৩৪ লাখ (১.৪০ বিলিয়ন) ডলারই দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
হিসাব বলছে, এই ১০ মাসে মোট ঋণের ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশই এসেছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থাটি থেকে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৫ কোটি ৮৪ লাখ (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মোট ঋণের ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ দিয়েছে সংস্থাটি।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার দিয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। রাশিয়া দিয়েছে ৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।
অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার মধ্যে জুলাই-এপ্রিল সময়ে চীনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৩২ কোটি ৭ লাখ ডলার। ভারত ছাড় করেছে ১৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।
ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৪২৫ কোটি ৯৪ লাখ (৪.২৬ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ (৭.৬০ বিলিয়ন) ডলার।
এ হিসাবে এই ১০ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৪ শতাংশ।