জুনে রাজস্ব আদায় কমেছে ৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৪৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি হয়েছে ২৫ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা, যা ৩৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এর জুনে আদায় হয়েছিল ৫৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে রাজস্ব আদায় কমেছে ৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের জুন মাসে তিন প্রধান রাজস্ব উৎস- আমদানি শুল্ক, আমদানি ভ্যাট ও আয়কর সবখাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমদানি শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। আগের বছরের একই মাসে আদায় ছিল ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

ভ্যাট খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৮৮ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ২০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস ৩০ দশমিক ১৬ শতাংশ।

আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৫১৩ কোটি, যা আগের বছরের ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার চেয়ে কম। প্রবৃদ্ধি কমেছে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বীকার করেছেন যে, জুনে রাজস্ব আদায়ে আন্দোলনের কারণে কিছুটা বাধা এসেছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ‘কিছুটা’ নয়, এনবিআর এক মাসে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে, আগের বছরের তুলনায়ও আদায় কমেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

এনবিআরের ভেতরে দীর্ঘদিনের জমে থাকা অসন্তোষ থেকে ২০২৪ সালের মে মাসে কর্মকর্তাদের একাংশ ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে। ২৮ ও ২৯ জুন তারা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও জুন মাসের শেষ সপ্তাহে রাজস্ব সংগ্রহ কার্যত থমকে দাঁড়ায়।

প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য এনবিআরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ পুরো অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ২০ শতাংশ।

আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০ কোটি টাকা। ঘাটতি ৪২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে আদায় হয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা।

স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট খাতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৯ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরে আদায় ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

কাস্টমস বা শুল্ক খাতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৯৮ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। আগের বছরের মতোই প্রবৃদ্ধি এখানে প্রায় শূন্য বা শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ।

সরকার ইতোমধ্যে আন্দোলনের ফলে ঠিক কতটুকু রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ধারণে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *