শেয়ারবাজারের জন্য বাজেটে যেসব সুবিধা রাখা হয়েছে

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

দীর্ঘ সময় ধরে বাজেটে অবহেলিত দেশের শেয়ারবাজারের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেশ কিছু সুবিধা রাখা হয়েছে। সোমবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় এই সুবিধাগুলোর ঘোষণা দেন।

তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান আড়াই শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামীদামি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।’

ব্রোকারেজের উৎসে কর কমানোর ঘোষণা দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন বৃদ্ধি উৎসাহিত করতে সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কাছ থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার ০ দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০ দশমিক ০৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর রেয়াত সুবিধা পাওয়ার শর্তও শিথিল করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কর পরিপালন সহজ করার জন্য লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ কর হার সুবিধা পাওয়ার শর্ত শিথিল করে আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগের পরিবর্তে কেবল সকল প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে।’

মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী (ইন্টারমেডিয়ারিজ) হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ হতে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।’

বিগত সরকারের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির কারণে দেশের পুঁজিবাজার প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পুঁজিবাজারে পুনরায় গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তকরণ, বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহ প্রদান, বাজারে কারসাজি রুখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা, এবং ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, বাজারে স্বচ্ছতা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন:

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে সরকারের মালিকানা কমিয়ে সেগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা;

দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনতে উৎসাহ প্রদান;

কারসাজি প্রতিরোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ;

অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা;

ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমিয়ে শেয়ারবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে সুযোগ বৃদ্ধি।

শেয়ারবাজারের সংস্কার নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে গত ১১ মে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে ছিল:

১. বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত শেয়ারবাজারে আনা;

২. সম্ভাবনাময় দেশীয় কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে প্রণোদনা দেওয়া;

৩. বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে তিন মাসের মধ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করা;

৪. অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ;

৫. বড় কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে শেয়ারবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহে উৎসাহ দেওয়া।

অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টার এসব নির্দেশনার প্রতিফলনই পরিলক্ষিত হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *