■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
মোস্তাফিজ-তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর ইমনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেল বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
দলের জয়ে ৩৯ বল মোকাবেলা করে ৩টি চার আর ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৫৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন পারভেজ হোসেন ইমন। তার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২৮ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ।
এই জয়ের আগে সবশেষ ২০১৬ সালে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
রোববার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯.৩ ওভারে ১১০ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন ওপেনার ফখর জামান। এছাড়া ২২ রান করেন আব্বাস আফ্রিদি।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ৩.৩ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে দেশি ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড গড়েন মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ ১২০ বলে মাত্র ১১১ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায়। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম পাকিস্তানি বাঁহাতি পেসার সালাম মিরাজের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন। তার আগে মাত্র ৪ বলে ১ রান করার সুযোগ পান তানজিদ।
তানজিদ আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাঁহাতি পেসার সালাম মিরাজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। তিনিও তানজিদের মতো ৪ বলে মাত্র ১ রানে ফেরেন।
লিটনের বিদায়ে ২.২ ওভারে মাত্র ৭ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর দলের হাল ধরেন তাওহিদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন ইমন। তারা ৬২ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান।
তাওহিদ হৃদয় ৩৭ বলে দুই চার আর দুই ছক্কায় ৩৬ রানে আউট হওয়ার পর জাকের আলি অনিককে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। তিনি ইনিংস ওপেন করতে নেমে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।
মিরপুরে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯ ওভার ৩ বলে ১১০ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেছেন ফখর জামান। জবাবে খেলতে নেমে ১৫ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন তানজিদ তামিম। ইনফর্ম এই ওপেনার ৪ বল খেলে এক রানের বেশি করতে পারেননি। তিনে নেমে ব্যর্থ লিটন দাস। বাংলাদেশ অধিনায়কও করেছেন এক রান।
৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে সেই বিপদ সামাল দেন পারভেজ ইমন ও তাওহিদ হৃদয়। এই দুজনের ৭৩ রানের জুটিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। ৩৭ বলে ৩৬ রান করেছেন হৃদয়।
হৃদয় ফিরলেও ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নিয়েছেন ইমন। মাত্র ৩৪ বলে মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৬ রান এসেছে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া অপরাজিত ১৫ রান করেছেন জাকের।
এর আগে বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস ওপেন করেন শেখ মেহেদি। এই ডানহাতি অফ স্পিনার সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষ ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছিলেন। লঙ্কায় যেখানে শেষ করেছিলেন আজ যেন ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেন মেহেদি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দিতে পারতেন তিনি। তবে তাসকিন আহমেদ সহজ ক্যাচ ফেলেছেন। তাতে ৪ রানে জীবন পান ফখর জামান।
ফখরের ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেননি তাসকিন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই সায়িম আইয়ুবকে ফিরিয়েছেন এই পেসার। ৪ বলে ৬ রান করেছেন সায়িম।
পরের ওভারেই উইকেট পেয়েছেন মেহেদি। তিনে নামা মোহাম্মদ হারিস এই স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাউ কর্ণারে শামীম হোসেনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৩ বলে ৪ রান করেছেন তিনি।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন লিটন। আক্রমণে এসেই ব্রেকথ্রু দিয়েছেন তানজিম সাকিব। সালমান আলি আগাকে রীতিমতো বোকা বানিয়েছেন সাকিব। এই পেসারকে র্যাম্প স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ধরা পড়েন সালমান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভার করতে এসে উইকেট পার্টিতে যোগ দেন মুস্তাফিজুর রহমানও। এই বাঁহাতি পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে থার্ড ম্যানে ধরা রিশাদ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন হাসান নাওয়াজ। ডাক খেয়ে এই ব্যাটার ফেরায় ৪১ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
মিডল অর্ডারে সুবিধা করতে পারেননি মোহাম্মদ নাওয়াজও। রান আউটের শিকার হয়েছেন এই ব্যাটার। বাকিদের ব্যর্থতার দিনে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেছেন ফখর। ব্যক্তিগত ফিফটির পথেই ছিলেন তিনি। তবে রান আউটের শিকার হয়ে ৪৬ রানে থামতে হয়েছে তাকে।
৭০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর খুশদিল শাহ ও আব্বাস আফ্রিদি মিলে ৩৩ রান যোগ করেন। এই জুটি ভেঙছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১০৩ রানে সপ্তম উইকেট হারানো পাকিস্তান অলআউট হয়েছে ১১০ রানে। ৭ রান যোগ করতেই শেষ ৩ উইকেট হারিয়েছে তারা।
মিরপুরের আজকের উইকেটে যেন ফিরে এসেছিলেন পুরোনো মুস্তাফিজ। তার স্লোয়ার আর কাটার পড়তে বেশ বেগ পেতে হয়েছে পাকিস্তানিদের। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার। এ ছাড়া তাসকিন পেয়েছেন ৩ উইকেট। একটি করতে উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব ও মেহেদি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের এই সংস্করণে এটিই দলীয় সর্বনিম্ন। আগের সর্বনিম্ন ১২৯/৭, ২০১৬ সালে মিরপুরেই এশিয়া কাপে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে হারাতে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১১১ রান। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে সফল বোলার তাসকিন আহমেদ। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমান ২টি এবং শেখ মেহেদী ও তানজিম সাকিব একটি করে উইকেট নেন।
তবে দুর্দান্ত বোলিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভার বোলিং করে সবচেয়ে কম রান দেওয়া বাংলাদেশি এখন মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার মুস্তাফিজের। এর আগে রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান ও মোস্তাফিজ নিজে ৪ ওভারে ৭ রান দিয়েছিলেন।