■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে বিচারের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিদেশে আত্মগোপনকারীদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
রোববার (১৩ অক্টোবর) ধানমন্ডিতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, বিচারক নিয়োগ হলে এ সপ্তাহেই জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে। শেখ হাসিনাসহ বিদেশে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৬০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
তাজুল ইসলাম বলেন, বিচারক নিয়োগ হওয়া মাত্রই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রয়োজনীয় কিছু আদেশ চাইব। এ বিচার শুরুর আগে যেগুলো দরকার গ্রেফতারি পরোয়ানা, আসামিদের বিদেশ যাওয়া বন্ধ করা, অনেক রকমের তথ্য উপাত্ত এগুলো সিজ করার জন্য আদেশ লাগবে। তাদের দ্রুততার সঙ্গে গ্রেফতারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য লাগবে। সে ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে আদেশ আসবে। তিনি বলেন, আদেশ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব কিন্তু ট্রাইব্যুনালের হাতে না, এটা দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত যাদের নির্দেশে ও যাদের কারণে এ গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল তাদের আমরা অগ্রাধিকার তালিকায় শুরুতে নিয়ে এসেছি। আইন অনুযায়ী তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হবে। কোনো অপরাধী বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকলে ইন্টারপোলের সিস্টেমের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের গ্রেফতারে বাংলাদেশ ইন্টারপোলে রেড নোটিস পাঠাতে পারে। আর এর কল্যাণে আমরা অনেককেই দেশে ফেরত আনতে পারব।’
তিনি বলেন, মূলত যাদের নির্দেশে ও যাদের কারণে এই গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তাদের বিষয়গুলো যারা টপ কমান্ডারস… তাদের আমরা প্রায়োরিটির তালিকায় শুরুতে নিয়ে এসেছি। আইন অনুযায়ী তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হবে। কোনো অপরাধী বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে থাকলে, ইন্টারপোলের সিস্টেমের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের গ্রেফতারে বাংলাদেশ ইন্টারপোলে রেড নোটিশ পাঠাতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গেল জুলাই ও আগস্ট মাসে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। বিচারের জন্য আইন সংশোধন ও ভবন মেরামতের কাজও চলমান। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ হবে। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটিকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল বহাল রাখা হয়। ফলে একটি ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকার্য চলমান ছিল।