■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে দুই টেস্টেই জিতেছিল বাংলাদেশ। ১৫ বছর পর কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে ১০১ রানের বড় জয়ে। সিরিজ শেষ করেছে ১-১ সমতায়।
জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। বিপরীতে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানে থামে ক্যারিবীয়রা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রান করেছে বাংলাদেশ। ২৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৮৫ রানে অলআউট হয়েছে ক্যারিবীয়রা।
আগের দিনের ৫ উইকেটে ১৯৩ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করে বাংলাদেশ। আগের দিনটা তাদের জন্য কেটেছিল দুর্দান্ত। নাহিদ রানার ফাইফারের পর ব্যাটাররাও ভরসা জোগান।
শেষ দিনে বাংলাদেশের জন্য ভরসা হয়ে থাকেন জাকের আলী। যদিও তাঁর অন্য প্রান্তের ব্যাটাররা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। শুরুটা হয় তাইজুল ইসলামকে দিয়ে। জাকেরের সঙ্গে তাঁর ৯৫ বলে ৩৪ রানের জুটি ভাঙেন আলজারি জোসেফ। ৫০ বলে ১৪ রান করে তাইজুল ক্যাচ আউট হন।
আগের দিন অসুস্থতার কারণে ব্যাটিংয়ে আসেননি মুমিনুল হক। আটে খেলতে নেমে শূন্য রানে স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি। তাঁর বিদায়ের পরও বাংলাদেশের আশা হয়ে থাকেন জাকের। তিনি পেয়ে যান হাফ সেঞ্চুরিও।
৮০তম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অর্ধশত পূরণ করেন তিনি। এর কিছুক্ষণ বাদে হাসান মাহমুদ আউট হন কেমার রোচের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে, ৬ বলে শূন্য রান করা তাসকিন তাঁর বাউন্সার টেনে আনেন স্টাম্পে। উইকেট যত পড়েছে, ততই মারমুখী হয়েছেন জাকের।
যদিও সেঞ্চুরি আর পাওয়া হয়নি তার। ৯১ রানে থাকতে আলজারি জোসেফের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে যান জাকের, তবে তাঁর ইনিংসটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেক দিন। জাকেরের বিদায়ের পর বাংলাদেশও অলআউট হয়ে যায়। তবে রানটা ততক্ষণে পৌঁছে গেছে বেশ ভালো জায়গায়।
রান তাড়ায় নেমে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে পাঁচ ওভারের মধ্যেই প্রথম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তাইজুলকে তখন বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি এসেই মিকাইল লুইসকে আউট করেন, এই ব্যাটার ক্যাচ দেন শর্ট লেগে শাহাদাৎ হোসেন দীপুর হাতে।
এক উইকেট না হারিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যাওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফেরার পর থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিল। কার্লোস ব্রাথওয়েট নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সামনে থেকে। তবে কেসি কার্টিকে এর মধ্যে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান তাসকিন, তখন তার রান ১৪।
ক্যারিবীয়দের হয়ে প্রতিরোধ গড়া কার্লোস ব্রাথওয়েট ফিরিয়ে দেন ইসলাম। তাঁর বলে স্লিপে দাঁড়ানো জয়ের হাতে ক্যাচ দেন ৬৩ বলে ৪৩ রান করা এই ব্যাটার। নিজের পরের ওভারে এসেও উইকেট পান তাইজুল।
এবার তিনি ফেরান আথানজেকে। ৬ বলে ৫ রান করে এই ব্যাটার হন বোল্ড। চা বিরতি থেকে ফেরার পর কেভম হজকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট পান তাইজুল। ক্যারিবীয়দের হয়ে ৭৫ বল খেলে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন হজ। মাঝে তাসকিনের একটি উইকেটের পর তাইজুল নিজের ফাইফার পূর্ণ করেন জশুয়া ডা সিলভাকে ফিরিয়ে। নিজের ক্যারিয়ারে ১৫তম বারের মতো এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি।
এরপর বাকি তিন উইকেট তুলে জয়টা পেতে খুব একটা দেরি করেনি বাংলাদেশ। এই জয় অনেকটা স্বস্তির বাংলাদেশের জন্য। ২০০৯ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আবার টেস্ট জিতল বাংলাদেশ, সব মিলিয়ে ৬ বছর পর। মেহেদী হাসান মিরাজও পেয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ।
কিংস্টনের এই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য ২০২৪ সালের শেষ টেস্ট। জয় দিয়ে বছর শেষ করার মাধ্যমে নিজেদের পুরোনো এক কীর্তিও ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৩ সালের পর আবার এক বছরে চারটি টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। এ বছরের আগের তিন জয় ছিল পাকিস্তান (দুটি) ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট আর ব্যাট হাতে প্রতিরোধের কারণে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন তাইজুল। যৌথভাবে সিরিজ-সেরা হয়েছেন দুই দলের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও জেইডেন সিলস। দুই টেস্টে তাসকিন নিয়েছেন ১১ উইকেট। অনেকটা ছাড়িয়ে যা তাঁর সেরা টেস্ট সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৬৪ ও ২৬৮ (জাকের ৯১, সাদমান ৪৬, মিরাজ ৪২, শাহাদাত ২৮; রোচ ৩/৩৬, আলজারি ৩/৭৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৪৬ ও ১৮৫ (হজ ৫৫, ব্রাফেট ৪৩; তাইজুল ৫/৫০, হাসান ২/২০, তাসকিন ২/৪৫)।
ফল: বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম।
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতা।
প্লেয়ার্স অব দ্য সিরিজ: তাসকিন আহমেদ ও জেইডেন সিলস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে যেসব রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ
স্মরণীয় এই জয়ে বাংলাদেশ সেসব কীর্তিতে গড়েছে দেখে নেওয়া যাক-
১
জ্যামাইকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ বা তার চেয়ে কম রানে অলআউট হয়েও এই প্রথম টেস্ট জিতল বাংলাদেশ।
২
২০১৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি পেসার হিসেবে টেস্ট সিরিজসেরা হন রবিউল ইসলাম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রবিউলের সিরিজসেরা হওয়ার ১১ বছর পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় পেসার হিসেবে টেস্টে সিরিজসেরা হলেন তাসকিন আহমেদ।
৩
দেশের বাইরে টেস্ট জয়ের দিক দিয়ে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশের প্রিয় ভেন্যু। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তিনটি টেস্ট জয় করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এছাড়া পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়েতে বাংলাদেশ দুটি করে টেস্ট জিতেছে।
৫
দেশের বাইরে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলিং এখন তাইজুল ইসলামের। জ্যামাইকায় ৫০ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেন তিনি। আগের সেরা মাহমুদউল্লাহর, ২০০৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫/৫১।
২৫
এই সিরিজের বাংলাদেশের পেসাররা মিলে পেয়েছেন ২৫ উইকেট। যা কোনো টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশি পেসারদের জন্য সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড। এর আগে দুবার এক সিরিজে সর্বোচ্চ ২১ উইকেট পেয়েছিলেন পেসাররা।
১০১
টেস্টে রানের হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় এটি। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের টেস্ট জয় ছিল ২০০৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্টে। সেবার ৯৫ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ।