■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
১০ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাঁচ আসরে অংশ নিয়ে শুধুমাত্র দুই ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এর মধ্যে গত চারটি বিশ্বকাপেই তারা ছিল জয়হীন।
স্কটিশদের হারানোর আগে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বশেষ জিতেছিল ২০১৪ সালে। সেবার সিলেটে নবম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ১৭ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর টানা চার আসরে ১৬ ম্যাচে মাঠ ছাড়তে হয়েছে হার নিয়েই।
শারজায় টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ৭ উইকেট করে ১১৭ রান। লক্ষ্য তাড়ায় স্কটল্যান্ডের মেয়েরা ৭ উইকেটে থামে ১০৩ রানে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১০ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশের মেয়েরা।
এ ম্যাচ দিয়ে শততম টি-টোয়েন্টি খেলার মাইলফলক পূর্ণ করেছেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ১০০ উইকেট শিকার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার।
সোবহানা মোস্তারির ৩৪ এবং সাথী রানির ২৯ রানের সুবাদে ১১৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মেয়েরা। পরে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকে স্কটল্যান্ড ব্যাটারদের নিয়ন্ত্রণে রেখে বোলিং করেছেন নাহিদা-মারুফারা।
লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় মাত্র ১২ রানেই প্রথম উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। সাসকিয়া হরলিয়াকে (৮) ফিরিয়ে ফাহিমা খাতুন প্রথম আঘাতটা হানেন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপ বাড়তে থাকে স্কটল্যান্ড শিবিরে। একে একে ক্যাথরিন ব্রাইস (১১), এইলসা লিস্টার (৫), প্রিয়ানাজ চ্যাটার্জিদের (৫) ফিরিয়েছেন মারুফা-রিতুরা। ফলে এক প্রান্ত আগলে রাখলেও যোগ্য সঙ্গীর অভাবে দলের বিপদ কাটাতে পারেননি সারাহ ব্রাইস।
তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন এই স্কটিশ ওপেনার। তার ভরসায় হয়তো জয়ের স্বপ্নও দেখছিল প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আসা স্কটল্যান্ডের মেয়েরা। শেষ পর্যন্ত সারাহ অপরাজিত ছিলেন ৪৯ রানে। ৫২ বলের ইনিংসে একটি চারের বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। এ ছাড়া বলার মতো রান পাননি আর কোনো ব্যাটারই। ৭ উইকেটে ১০৩ রানের বেশি করতে পারেনি স্কটল্যান্ড।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট পেয়েছেন রিতু মনি। এ ছাড়া একটি করে শিকার ধরেছেন মারুফা, রাবেয়া, ফাহিমা ও নাহিদা। স্বর্ণা আক্তার বাদে বাকি সবাই মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন।
ম্যাচ জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের মনে ছিল, এটাই আমাদের সময়। এই জয় আমাদের জন্য অনেক অর্থবহ। এই ধরনের উইকেটে মানিয়ে নেওয়া জরুরি ছিল, এবং শুরুতে ব্যাট করা মোটেও সহজ ছিল না। তবে রানী ও মোস্তারির পার্টনারশিপ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা একটি ভালো স্কোর দাঁড় করিয়েছিলাম, এবং আমাদের নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস ছিল।’
এ ম্যাচে দেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে শততম উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার। তাকে অভিনন্দন জানিয়ে নিজের স্পিন আক্রমণের কথা তুলে ধরেন টাইগ্রেস অধিনায়ক, ‘আমাদের স্পিন আক্রমণ খুবই ভালো, এবং মারুফাও দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। তাই আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম যে আমরা আমাদের স্কোর ডিফেন্ড করতে পারব। আমরা কিছুটা আলাদা কৌশল নিয়ে কাজ করছি, যেমন আমি নিচে ব্যাট করছি। তাজ (নেহার) শেষ দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো খেলেছিল, এবং পরিকল্পনা ছিল সে কিছু বাউন্ডারি মারবে। যদিও তা সম্ভব হয়নি, তবে আমরা যেভাবে গতি পেয়েছি, তাতে আমি খুশি। মেয়েদের হাসি আমার জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।’
ম্যাচসেরার পুরস্কার জয়ের পর রিতু মনি বলেন, ‘উইকেট মোটামুটি ভালো ছিল, তাই আমি চেষ্টা করেছি সঠিক লাইনে বল করে আমার বৈচিত্র্য কাজে লাগাতে। আমরা গত বছর অনেক পরিশ্রম করেছি, এবং সেই পরিশ্রম আজ ফল এনে দিয়েছে। এটি আমার এবং দলের জন্য অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত। আমরা কন্ডিশন বুঝে আমাদের শক্তির উপর নির্ভর করে বল করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কন্ডিশন অনুযায়ী বল করা এবং প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল।।
শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ইংল্যান্ড। এ ম্যাচ জিততে পারলে সেমিফাইনালের দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে যাবে টাইগ্রেসরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৯/৭ (মোশতারি ৩৬, সাথি ২৯, নিগার ১৮, মুরশিদা ১২, ফাহিমা ১০*; হরলি ৩/১৩, ফ্রেসার ১/২৩)।
স্কটল্যান্ড: ২০ ওভারে ১০৩/৭ (ব্রাইস ৪৯*, লিস্টার ১১; রিতু ২/১৫, মারুফা ১/১৭, নাহিদা ১/১৯)।
ফল: বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রিতু মনি।