কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ■

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার পুটিয়া সীমান্তের ওপারে চোরাকারবারি সন্দেহে গুলির এই ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার রাতে উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের পুটিয়া সীমান্তের ২০৫০ নম্বর পিলার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত আল আমিন মিয়া (৩২) উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের দক্ষিণ পুটিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, পুটিয়া এলাকার ভারত সীমান্তের ২০৫০ পিলার এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে আল আমিন মিয়ার বাড়ি থেকে একটি গরু সীমান্তের শূন্যরেখায় চলে যায়। এ সময় গরু আনতে সীমান্তের শূন্যরেখায় যায় আল আমিন। ওই সময় ভারতীয় বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আহত হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে। গুরুতর অবস্থায় বিএসএফ তাকে ভারতের বিশালঘর হাসপাতাল নিয়ে যায়। শুক্রবার রাতেই আল আমিন মিয়া মারা যায়। শনিবার সকালে মারা যাওয়ার বিষয়টি বিজিবিকে নিশ্চিত করে বিএসএফ।

আল আমিনের লাশ দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের পর তারা লাশ হস্তান্তর করে।

শনিবার (১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুটিয়া সীমান্তের ২০৫০ পিলারের সামনে পতাকা বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারের কাছে মরদেহ তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে সুলতানপুর বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান ও কসবা থানার ওসি আব্দুল কাদের অপরদিকে বিএসএফের পক্ষে ৪৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার অজিত কুমারসহ বিএসএফের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নিহত আল আমিনের বাবা সুলতান মিয়া জানান, তার চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে আল আমিন ছিলো তৃতীয় সন্তান। সে খুব শান্ত স্বভাবের ছিলো। তাদের বাড়ি থেকে সীমান্ত তিনশ গজ দুরত্বে অবস্থিত। শুক্রবার সন্ধ্যায়  রশি দিয়ে গরু বাঁধার সময় একটি গরু ছুটে দৌঁড়ে চলে যায় সীমান্তের শূন্য রেখার ভারতীয় অংশে। সেখান থেকে গরুটি আনতে যায় আল আমিন।

এসময় ভারতীয় শূন্যরেখায় গেলে বিএসএফের সদস্যরা তাকে গুলি করে। সে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বিএসএফ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে নিয়ে যায় ভারতে। সেখানে হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রাণ হারান আল আমিন- এমনটাই খবর পায় আল আমিনের পরিবার।

এদিকে আল আমিনের মৃত্যুর খবরে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নির্বাক হয়ে গেছে আল আমিনের মা, পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা। তার মরদেহ ফিরে পাওয়ার দাবি জানানোর পাশাপাশি হত্যার বিচার দাবি করেন সুলতান মিয়া।

নিহতের স্ত্রী তারিন আক্তার বলেন, তাদের বিয়ের মাত্র ৬ মাস হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। গর্ভে ২ মাসের অনাগত সন্তান। কি হবে এই অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত।

এ নিয়ে গত ৩ মাসে বিএসএফ ৮ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং অনেককে আহত করেছে। 

এর আগে সকালে ৬০ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান বলেন, শুক্রবার রাতে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক আল আমিন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছিলো বিএসএফ। এরপর আল আমিনের মারা যাওয়ার খবরটি জানিয়েছে শনিবার সকালে। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মরদেহ ফেরত দিতে পতাকা বৈঠকের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিএসএফ থেকে সময় পাওয়ার পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মরদেহ ফেরত আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছামিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশের যুবক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। বিজিবির পক্ষ থেকে মরদেহ হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। সম্ভবত শনিবার বিকেলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পর্যায়ে পতাকা বেঠকের মাধ্যমে মরদেহ ফেরত আনার কথা জানিয়েছে বিজিবি।

বিজিবির বরাত দিয়ে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাতে আলামিন পুটিয়া সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিল। এ সময় বিএসএফ তাকে চোরাকারবারি সন্দেহে গুলি করে। এতে আল আমিন গুরুতর আহত হয়। পরে বিএসএফ তাকে উদ্ধার করে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়। তার লাশ এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।

এ বিষয়ে বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়নের সালদানদী ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার আবু বক্কর জানান, গতকাল (শুক্রবার) রাতে আল আমিন নামক এক ব্যক্তিকে এক রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে বিএসএফ। এরপর তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি আমি আমার অফিসারদের জানিয়েছি। আজকে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে অফিসার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের কথা রয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *