ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কিশোর নিহত

:: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ::

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে শ্রী জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫) নামে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে আরও দুজন।

তারা হলেন- জয়ন্তের বাবা মহাদেব চন্দ্র (৪৩) এবং প্রতিবেশী দরবার হোসেন (৫০)। তারা পালিয়ে এসে রংপুরে গোপনে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার সময় ধনতলা সীমান্তের নিটালডোবা গ্রামের ৩৯৩ নম্বর পিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত শ্রী জয়ন্ত কুমার সিংহ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফকির ভিঠা গ্রামের শ্রী মহাদেব কুমার সিংহের ছেলে। তারা ধনতলা ইউনিয়নের ঠুমনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। জয়ন্ত লাহিড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র ছিল। অপর আহত দরবার হোসেন নিটালডোবা গ্রামের বাঠু মোহম্মদের ছেলে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার সময় সীমান্ত থেকে নিহত কিশোরের মরদেহ নিয়ে গেছে ভারতের ডিঙ্গাপাড়া বিএসএফর সদস্যরা। 

স্থানীয়রা জানায়, ভোর রাতে মহাদেব, তার একমাত্র ছেলে জয়ন্তসহ আরও ১৫-২০ জন ৩৯৩ নম্বর পিলার দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল। এ সময় ভারতের ডিঙ্গাপাড়া সীমান্তের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে মারা যায় জয়ন্ত কুমার। এ সময় পায়ে গুলি লেগে আহত হোন মহাদেব ও প্রতিবেশী দরবার হোসেন। 

নিহত কিশোর জয়ন্তের মা ও মহাদেবের স্ত্রী অধিকা রানী ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সকাল থেকে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা চলছে তাঁর। 

আহত দরবার হোসেনের ভাতিজা হামিদুল ইসলাম জানান, সকালে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন চাচা। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে কোন হাসপাতালে নিয়ে গেছে বলতে পারছেন না তিনি। 

নিহত কিশোর জয়ন্তের মা ও মহাদেবের স্ত্রী অধিকা রানী ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সকাল থেকে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা চলছে তাঁর। 

জয়ন্তের বড় বোন স্মিতা রানী বলেন, ‘ভাইয়ের মৃত্যু এবং বাবার গুলি লেগেছে শোনার পর মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে চিকিৎসা চলছে।’ বাবা কোনো হাসপাতালে আছেন বলতে চাননি স্মিতা। তবে ভাইয়ের মুখ শেষবারের মতো দেখার জন্য লাশ ফেরতের দাবি জানান তিনি।

ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজীর আহাম্মদ জানান, ‘আমরাও স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি একজন মারা গেছেন, দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সমর কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, গতকাল রাতে ধনতলা সীমান্ত এলাকার ৩৯৩ নম্বর মেইন পিলার এলাকা দিয়ে একদল লোক স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের ডিঙ্গাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। এতে জয়ন্ত ঘটনাস্থলে মারা যায়। বিএসএফের সদস্যরা তার লাশ নিয়ে যান। গুলিতে জয়ন্তের বাবা মহাদেব কুমার সিংহ ও দরবার আলীও আহত হন। তাঁরা দুজন বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসেন। পরে স্বজনেরা তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যান।

সমর কুমার চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে যাওয়ার সময় ভারতের অভ্যন্তরে ১৬ জন বাংলাদেশি বিএসএফ সদস্যের হাতে আটক হয়েছেন বলেও জানতে পেরেছি।’

বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবীর মুঠোফোনে বলেন, বালিয়াডাঙ্গীর ধনতলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের একদল লোক  ভারতের ওপারে যাওয়ার সময় বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালান। এতে এক কিশোর নিহত ও দুজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহত দুজন রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর মা সঞ্জিতা রানী দাসের সঙ্গে কিশোরী স্বর্ণা দাস (১৪) কুলাউড়া উপজেলার লালারচক সীমান্ত দিয়ে ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিল। এ সময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে স্বর্ণা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার বুকে গুলি লাগে। সে জুড়ীর নিরোদ বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। পরে বিএসএফ তার লাশ নিয়ে যায়। ৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *