■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, নেপালে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন। এ ছাড়া ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হলেই তারা ফিরতে পারবেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা জানান।
নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকরা আটকে পড়েছেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, জাতীয় দলের ফুটবলারসহ সবাই নিরাপদে আছেন। পরিস্থিতি শান্ত হলেই তারা ফেরত আসতে পারবেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, এয়ারপোর্ট যতক্ষণ পর্যন্ত না খুলছে, কিছু তো করা যাবে না। এমন নয় যে ভারতের ভেতর দিয়ে আনা যাবে, কারণ তাদের কারও তো ভারতের ভিসা নেই। কাজেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। একটা ভালো জিনিস যেটা হয়েছে, সেটা হলো তারা (বিক্ষোভকারীরা) তাদের রাজনীতিবিদদের খুঁজতে গিয়েছিল হোটেলে, সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল টিমকে দেখে কিন্তু তারা সম্মানের সাথে সরে গেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রতি তাদের খারাপ কোনো ফিলিং নাই। কাজেই আমি মনে করি না যে কোনো ক্রাইসিস হবে। আমাদের দূতাবাস তাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছে। আমরা আশা করি, সবাই ঠিকঠাক চলে আসতে পারবে। একটু সময় লাগবে। অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এয়ারপোর্ট যতক্ষণ পর্যন্ত না খুলছে, কিছু তো করা যাবে না। এমন নয় যে ভারতের ভেতর দিয়ে আনা যাবে, কারণ তাদের কারো তো ভারতের ভিসা নেই।কাজেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। একটা ভালো জিনিস যেটা হয়েছে, সেটা হলো তারা (বিক্ষোভকারীরা) তাদের রাজনীতিবিদদের খুঁজতে গিয়েছিল হোটেলে, সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল টিমকে দেখে কিন্তু তারা সম্মানের সঙ্গে সরে গেছে।’
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, যদি জাতিসংঘ রাশিয়া–ইউক্রেন সীমান্তে একটি বাফার জোনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলাদেশ ইতিবাচক সাড়া দেবে। আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই এমন পরিস্থিতি হলে অবশ্যই অংশ নিতে চাই।
বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যে পানিবণ্টন নিয়ে সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আপডেট পাননি। তথ্য পেলেই আপনাদের জানাবো।
উপদেষ্টা জানান, ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হলেই তারা ফিরতে পারবেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাফার জোনে বাংলাদেশি সেনা পাঠাতে জাতিসংঘ প্রস্তাব দিলে সম্মতি জানানো হবে বলে জানান তিনি।
সহিংসতায় টালমাটাল নেপাল। বন্ধ হয়ে যায় বিমান চলাচল। তবে দুই দিন পর চালু হয়েছে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তারপরও ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে বিমান।
এ পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি।
এদিকে, কাতারে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
নেপালে মারধরের শিকার এক বাংলাদেশি পরিবার, ৩০ জনকে উদ্ধার
নেপালে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে মারধর ও লুটের শিকার হয়েছে এক বাংলাদেশি পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে। আতঙ্কগ্রস্ত পরিবারটিকে আজ বুধবার রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস।
কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপমিশন প্রধান মো. শোয়েব আবদুল্লাহ এসব তথ্য জানান।
কাঠমান্ডু থেকে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আজ বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১০ জন এবং শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ২০ জনসহ মোট ৩০ জনকে উদ্ধার করেছে দূতাবাস। তাঁরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মঙ্গলবারের (৯ সেপ্টেম্বর) যাত্রী ছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করে বিমানের নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিমানের অন্য যাত্রীদের বিমান সরাসরিই দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার নেপালের একটি পাঁচ তারকা হোটেল পুরো পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আর হায়াত রিজেন্সি হোটেল নামের আরেকটি পাঁচ তারকা হোটেলে ভাঙচুর চালান। সেই হোটেলে তিন সদস্যের এক বাংলাদেশি পরিবার ছিল। পরিবারটি মারধর ও লুটের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল পর্যটকদের বহনকারী একটি গাড়ি বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে যায়। বাসের চালক ভয় পেয়ে গেলে গাড়িটি বিক্ষোভকারীদের ওপর ওঠে যায়। সে সময় বিক্ষোভকারীরা গাড়িটি পুড়িয়ে দিয়েছেন। গাড়িটিতে এক বাংলাদেশি তরুণী ছিলেন। তবে তিনি সুস্থ আছেন।
জাতীয় ফুটবল দল এবং শিক্ষাসফরে যাওয়া ডিফেন্স কলেজের ৫১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্পর্কে জানতে চাইলে শোয়েব আবদুল্লাহ জানান, বাংলাদেশ ফুটবল দলকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাওয়া গেছে। আশা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার সকালে ফ্লাইটটি কাঠমান্ডু এসে পৌঁছাবে। যেহেতু ফ্লাইট আবারও শুরু হয়েছে, ফলে ডিফেন্স কলেজের প্রতিনিধিরা নিয়মিত ফ্লাইটে ফেরত যাবেন। বিগত দিনের ফ্লাইট বাতিল হওয়া যাত্রীদের জন্য একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট চালানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে, সেটি এখনো পাওয়া যায়নি।
নেপালে আটকে পড়াদের উদ্ধারে বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ
নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে একটি বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ। আটকে পড়া নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তারা। কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন শোয়েব আব্দুল্লাহ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ১৯ জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হন। এর জেরে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন এবং ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে সেখানে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়সহ মোট ৩২ জন। পাশাপাশি প্রশিক্ষণে যাওয়া ডিএসসিএসসির সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ৫০ জন কর্মকর্তা এবং ১০-১২ জন ক্রীড়া সাংবাদিকও ফিরতে পারেননি।
দূতাবাস সূত্র জানায়, নেপালে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ৫০-৬০ জন বাংলাদেশি। এছাড়া প্রতিদিনের ফ্লাইট চলাচলের হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে সেখানে এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি পর্যটক রয়েছেন। তবে সবাই নিরাপদ আছেন বলে আশ্বস্ত করেছে দূতাবাস।
দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের অযথা বাইরে বের না হতে এবং হোটেল বা নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নেপালে ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে তা আপাতত বাতিল করার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস থেকে দুটি হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। নাম্বার দুটি হলো, +৯৭৭ ৯৮০৩৮৭২৭৫৯ এবং +৯৭৭ ৯৮৫১১২৮৩৮১।
দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ ফোনকল এসেছে, যার বেশিরভাগই বিমান চলাচল বিষয়ে তথ্য জানতে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মঙ্গলবার থেকে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে আটকে থাকা ১০-১২ জন বাংলাদেশি পর্যটককে হোটেলে নেওয়া হয়েছে।