ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ইন্তেকাল করেছেন

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

দেশের প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকাল তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

রোববার (৪ মে) বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে তিনি রাজধানীর  ইবনে সিনা হাসপাতালে মারা যান। তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট শিশির মনির ও অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানান, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গুরুতর অসুস্থ হয়ে কয়েকদিন ধরে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর দীর্ঘ ১১ বছর পর গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় ফেরেন। ৬ জানুয়ারি তার জুনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে তাকে সংবর্ধনা দেন।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়ান। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার ৫ দিনের মাথায় হাসিনা সরকারের কবল থেকে বাঁচতে তিনি দেশ ছাড়েন।

যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তখন দলটির আমির শফিকুর রহমান এক বার্তায় বলেছিলেন, তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি তার সঙ্গে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

জামায়াত ছাড়ার কারণ হিসেবে সেখানে তিনি দুটি বিষয়ের কথা লেখেন।

“জামায়াত ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি এবং একবিংশ শতাব্দির বস্তবতার আলোকে এবং অন্যান্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিবেচনায় এনে নিজেদের সংস্কার করতে পারেনি।”

এরপর ২০২১ সালের ৩ মে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আব্দুর রাজ্জাককে দলের প্রধান উপদেষ্টা করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে ‘ভিন্নমত পোষণ করা’ একদল নেতাকর্মী ২০১৯ সালে বেরিয়ে এসে প্রথমে ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন মঞ্চ গঠন করেছিলেন। পরে তারাই ২০২০ সালের ২ মে এবি পার্টি নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১৭ অগাস্ট এবি পার্টি থেকেও পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক।

দেশে ফিরে বিমানবন্দরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন,  আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে আমার অবদান রাখার চেষ্টা করব। আইনের শাসন একটি অতি বড় জিনিস। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে আমাদের রাজনীতি সফল হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। সুতরাং আইন অঙ্গনে আমার বিচারণ, আইন অঙ্গনে আমি থাকব। আইন অঙ্গনের মাধ্যমে আমি দেশ ও জাতির খেদমত করার চেষ্টা করব।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশসেরা ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলা ও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের প্রধান আইনজীবীর দায়িত্বে ছিলেন।

ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ১৯৪৪ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সা‌লে তি‌নি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যা‌রিস্টার ডিগ্রি অর্জন ক‌রেন। ১৯৮৫ সা‌লের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ড‌নেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছি‌লেন। দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হন।  

ব্যা‌রিস্টার রাজ্জাকের দুই ছে‌লে ও এক মে‌য়ে রয়েছে। দুই ছেলে ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা পরিচালনা করছেন।

এশার নামাজের পর রাত সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে এবং সোমবার বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আব্দুর রাজ্জাকের জানাজা হবে।

লন্ডনে আইন পড়া রাজ্জাক ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে অ্যাডভোকেট হিসেবে এনরোলমেন্ট নেন। ওই সময় থেকেই তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

তবে আইনজীবী হিসেবে রাজ্জাকের নাম আলোচনায় আসে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে তাদের প্রধান আইনজীবী হিসেবে আদালতে দাঁড়ান রাজ্জাক।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *