ব্যারিস্টার সুমন গ্রেফতার, ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

মিরপুর থানায় করা হত্যাচেষ্টা মামলায় হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মিরপুর ৬ নম্বর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার সকালে মিরপুর থানার এসআই মো. আব্দুল হালিম এই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেছেন, ব্যারিস্টার সুমনকে আটক করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি একজন ব্যারিস্টার বিধায় জিজ্ঞাসাবাদে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলেছেন। কৌশলে প্রকৃত ঘটনা এড়িয়ে গেছেন। 

তদন্ত কর্মকর্তা আবেদনে আরও উল্লেখ করেছেন, গত জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও ব্যারিস্টার সুমন আওয়ামী লীগের একজন উদীয়মান নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়নে প্রকাশ্যে ও গোপনে তিনি নির্দেশ ও উসকানি দিয়েছেন। প্রকৃত ঘটনা জানতে এবং মামলার এজাহার নামের পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য ব্যারিস্টার সুমনকে রিমান্ডে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

আদালতে আইনজীবীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রিমান্ড শুনানি শেষে এ কথা বলেন তিনি। হত্যাচেষ্টা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার সুমন কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এসময় সুমন বলেন, আপনার সঙ্গে আলাদা করে কিছু বলব না স্যার। আপনার মাধ্যমে সব আইনজীবীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি খুব সরি স্যার।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ব্যারিস্টার সুমনকে আদালতে আনা হয়।

এর আগে সোমবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে মিরপুর-৬ এলাকা থেকে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে মিরপুর থানার পুলিশ মিরপুর ৬ নম্বর এলাকা থেকে ব্যারিস্টার সুমনকে আটক করে। পরে হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার ছাতিয়ইন ইউনিয়নের যুবদলের সহসভাপতি হৃদয় মিয়াকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। 

গত ২৩ সেপ্টেম্বর হৃদয় মিয়া মিরপুর থানায় এই মামলা করেন। তিনি মিরপুর ১০ নম্বরের একটি হোটেলের সহকারী বাবুর্চি বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি ব্যারিস্টার সুমন।

তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, গত ১৪ জুলাই থেকে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দিয়ে মিছিল-মিটিং করেন। গত ১৯ জুলাই দুপুরের পর মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টি গলিতে তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে ছিলেন। বেলা আড়াইটার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গুলিতে তার ডান পায়ের হাঁটুর ওপরের বাটি দুই ভাগ হয়ে যায়। এ সময় পাশের এক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। 

স্থানীয়রা তাঁকে নিয়ে পাশের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বিএনপির নেতা, সে কারণে তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। পরে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। সুস্থ হয়ে মামলা করেন। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ঘটনার দিন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মী লোহার রড, হাঁসুয়া, পিস্তল, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ মিছিলকারীদের ওপর হামলা করেন। তাঁদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। 

মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ব্যারিস্টার সুমনসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *