■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিডিআর হত্যাকাণ্ড বিষয়ে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে আমি প্রথম থেকেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চত করতে সোচ্চার ছিলাম, এখনও আছি।
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে আমি শুরু থেকেই ন্যায়বিচার চেয়ে আসছি। এবিষয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথমবার এবং ৪ নভেম্বর বিজিবির সদর দপ্তর পরিদর্শনের সময় দ্বিতীয় বার ঘোষণা দিয়েছি, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য হিসেবে আমি শুরু থেকেই এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করে আসছি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, জনগণের অধিকার, সুশাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
তদন্ত কমিটিতে কারা থাকবেন, প্রশ্নে তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, সিভিল সার্ভিস, সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্য সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। সদস্য ৫ জন, ৭ জন, ৯ জনও হতে পারে। তবে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য সংখ্যা একটু বেশি থাকবে।
কমিটি কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা ৫ কার্যদিবসের সময় বলব। আগে কমিটি গঠনের জন্য নামগুলো নিতে হবে। আপনারা জানেন এসব কমিটিতে সবাই আসতে চায় না। এটা একটা সমস্যা। নাম সংগ্রহে যদি সময় না লাগত তাহলে অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে যেতো। নাম পাওয়ার পর তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারপর আমরা সময়টা বলতে পারব।
কাজের পরিধি কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনার পর বলতে পারব।
বিচারপতি নাকি অন্য কারো নেতৃত্বে কমিটি হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যিনি মোস্ট সিনিয়র থাকবেন তার নেতৃত্বেই এই কমিটি হবে।
কমিটি না কমিশন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বসার পর যদি মনে হয় কমিটি না কমিশন হবে। প্রয়োজন যেটা সেটাই করা হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো বিভ্রান্তি আছে কিনা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, না, আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো বিভ্রান্তি নেই। তবে বসার সময় আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বসে, তাদের আলাদা মতামতের দরকার হলে আমরা নেব।
এর আগে গত রোববার হাইকোর্টকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনই কমিশন গঠন করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে দুটি মামলা বিচারাধীন থাকায় কমিশন গঠন থেকে আপাতত সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই অসন্তোষ জানাতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন একটি তদন্ত প্রয়োজন বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ অনেকে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিডিআর হত্যার পুরো ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠনের কথা সামনে আসে।