■ বেরোবি প্রতিনিধি ■
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় ৫৬ শিক্ষার্থীকে এক ও দুই সেমিস্টার করে বহিষ্কারসহ ১৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী।
এর আগে ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ ৩৩ জনকে ২য় সেমিস্টার ড্রপ ও ২৩ জনকে ১ সেমিস্টার ড্রপের সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত হয়।
বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনায় বেরোবির অভিযুক্তদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এছাড়া হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কিন্তু নোটিশের জবাব না আসায় আগামী সিন্ডিকেটের তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ বহিষ্কারের জন্য বিষয়টি উঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম শওকত আলী। একইসঙ্গে ২০১৮ সালে প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভিসিকে সমর্থন দিয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
এছাড়াও ১০৯ তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ তৈরির কমিটিও করা হয়েছে।
ভিসি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এজন্য শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। তাদের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য নীতিমালা এই সিন্ডিকেট অনুমোদন করেছে। পরবর্তীতে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের তোলা দাবি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে শৃঙ্খলা বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড ও জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের নিপীড়নে জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শনাক্ত এবং শাস্তির ধরন নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমানকে সদস্যসচিব ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক, সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৭২ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি।
গত ১৬ জুলাই বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ, যে ফটকটি পরে ‘শহীদ আবু সাঈদ গেট’ নামকরণ করেন শিক্ষার্থীরা।