বেরোবির সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ গ্রেফতার

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে দুদক কর্তৃক তদন্তাধীন একটি মামলায় দুদকের রিকোজিশন ছিল। সেটির ভিত্তিতে গোয়েন্দা কার্যক্রমে পরিচালনার মাধ্যমে মোহাম্মদপুরে নিজ বাসা থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ভিসি নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুদকের কাছে তাকে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

ডিবি জানায়, সাবেক ভিসি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এর আগে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে নকশা পরিবর্তন, অর্থ আত্মসাৎ এবং ঠিকাদারকে অগ্রিম বিল প্রদানের মতো গুরুতর অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক দুই উপাচার্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করে।

মামলার আসামিরা হলেন- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক এ কে এম নূর-উন-নবী, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার আ. সালাম বাচ্চু এবং ঠিকাদার এম এম হাবিবুর রহমান।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বুধবার (১৮ জুন) গণমাধ্যমকে জানান, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের অর্থের অপচয় ও আত্মসাতের মতো অপরাধ করেছেন। তারা অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন করেন। ৩০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে চুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই সম্পাদন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পে ঠিকাদারের রানিং বিল থেকে কর্তনকৃত নিরাপত্তা জামানত এফডিআর আকারে ব্যাংকে জমা রাখার কথা থাকলেও তা লিয়েনে রেখে ঠিকাদারকে লোন প্রদানের জন্য ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, চুক্তিতে অগ্রিম বিল প্রদানের কোনো ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদারকে আর্থিক সহযোগিতার কারণ দেখিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ করে অগ্রিম বিল প্রদান করা হয়। এমনকি, ওই বিলের সমন্বয় হওয়ার আগেই ব্যাংক গ্যারান্টি অবমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত নকশা ও ডিজাইন উপেক্ষা করে সরকারি ক্রয়বিধি লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমনকি দরপত্রে অস্বাভাবিক মূল্য দাখিল ও ফ্রন্ট লোডিং থাকা সত্ত্বেও সরকারি ক্রয় বিধিমালা অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন সম্পন্ন করা হয়নি।

এ ঘটনাগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা ও ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানায় দুদক।

আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তার বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতির অভিযোগ আছে যদিও তিনি তা অস্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ১১১টি দুর্নীতির ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৃহৎ সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ। ২০১৯ সালে শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান স্বাক্ষরিত শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৪৫টি অভিযোগ করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা ছাত্রী হল, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইন্সটিটিউটসহ স্বাধীনতার স্মারক নির্মাণকাজেও উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির আরেকটি তদন্ত কমিটি। এজন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের জুনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। এ ছাড়া তিনি ঢাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপির) উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *