আরও ১৪ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

আওয়ামীপন্থী আরও ১৪ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।

সংস্থাটির চিঠিতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত ১৪ সাংবাদিকের স্বামী বা স্ত্রী এবং পুত্র-কন্যাসহ তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্যাদি যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, লেনদেনের বিবরণীসহ আনুষঙ্গিক তথ্য পাঠাতে হবে।

বিএফআইইউর পক্ষ থেকে নতুন করে যেসব সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন-অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) ব্যুরোপ্রধান জুলহাস আলম, ইউএনবির উপদেষ্টা সম্পাদক ফরিদ হোসেন, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার, ঢাকা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আলী আসিফ শাওন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাদিম কাদের, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক রাজীব ঘোষ ও তাহমিদা সাদেক জেসি, ডেইলি পিপলস লাইফের সম্পাদক আজিজুল হক ভুঁইয়া, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার খেলাধুলা বিভাগের প্রধান স্বপন বসু, চ্যানেল আইয়ের নীলাদ্রি শেখর কুন্ডু, বাংলা টিভির নজরুল কবীর, গাজী টিভির ইকবাল করিম নিশান, গ্রিন টিভির সাজু রহমান ও বাংলাভিশনের সাবেক সাংবাদিক আমিনুর রশিদ।

এর আগে ৫ জানুয়ারি ২১ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয় এমন ২১ সাংবাদিক হলেন- দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, ডিবিসি নিউজের বার্তা প্রধান প্রণব সাহা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হাসান জাহিদ তুষার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান সম্পাদক ও সিইও এম শামসুর রহমান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বার্তা প্রধান মামুন আবদুল্লাহ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট অনিমেষ কর, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. রুহুল আমিন রাসেল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের উপ-সম্পাদক মাহমুদ হাসান।

এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন- দৈনিক খোলা কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার জাফর আহমেদ (বর্তমানে বাংলানিউজে কর্মরত), দৈনিক জাতীয় অর্থনীতির সম্পাদক এমজি কিবরিয়া চৌধুরী, আমাদের সময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতির চিফ রিপোর্টার দীপক চৌধুরী, একুশে টিভির হেড অব ইনপুট অখিল কুমার পোদ্দার, একাত্তর টিভির সাংবাদিক ঝুমুর বারী, একুশে সংবাদ ডটকমের সম্পাদক জিয়াদুর রহমান, দৈনিক কালবেলার বিশেষ প্রতিনিধি আঙ্গুর নাহার মন্টি ও মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী, এস এ টিভির হেড অব নিউজ মাহমুদ আল ফয়সাল, এস এ টিভির নির্বাহী পরিচালক রাশেদ কাঞ্চন, বাসসের সিনিয়র রিপোর্টার শাহনাজ সিদ্দিকী, একুশে টিভির সাংবাদিক রাশেদ চৌধুরী ও সমকালের সাংবাদিক রামা প্রসাদ।

বিএফআইইউ`‘র চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তি (স্বামী/স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ) ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবগুলোর তথ্যাদি (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও তৎসংশ্লিষ্ট দলিলাদি এবং শুরু হতে হালনাগাদ লেনদেন এর বিবরণী ইত্যাদি) প্রেরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হল।

এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর বিএফআইইউ যে ১২ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছিল— তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বাদল, ঢাকা টাইমসের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, বাংলাদেশ পোস্টের বিশেষ প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম হাসিব, নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দ্বীপ আজাদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. ওমর ফারুক। তালিকায় আরও ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) সাবেক মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি হোসনে আরা মমতা ইসলাম সোমা, দৈনিক জনকণ্ঠের উপসম্পাদক ওবায়দুল কবীর মোল্লা, দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত এবং গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশ‌তিয়াক রেজা।

২৪ নভেম্বর যাদের হিসাব তলব করা হয়েছে তারা হলেন— দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান, টিভি টুডে প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ওয়াশিংটনের সাবেক প্রেস মিনিস্টার সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, ডিবিসি নিউজের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর নাজনীন মুন্নি, ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ ঘোষ সৈকত, গাজী টিভির এডিটর (রিসার্চ) অঞ্জন রায়, সময় টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ কমল দে, দৈনিক আমার সময়ের প্রধান সম্পাদক আব্দুল গাফফার খান, যুগান্তরের সাবেক নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রাজু আহমেদ এবং এক্সিম ব্যাংকের হেড অব পিআরও সঞ্জীব চ্যাটার্জী।

হিসাব তলব করা ব্যক্তি ও তাদের ব্যক্তি মালিকানা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের সব ধরনের লেনদেন আগামী ৩০ দিন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে।

চিঠি দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে এসব সাংবাদিকের বিষয়ে তথ্য দিতে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, শেয়ারবাজার লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও দফায় দফায় বিভিন্ন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করে বিএফআইইউ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্মের সহযোগী ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এমন সন্দেহে বেশকিছু পেশাজীবীদের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করে বিএফআইইউ।

তলব করা হিসাবগুলোতে সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক লেনদেন কিংবা অর্থপাচার বা অনিয়মের কোনো প্রমাণ মিললে এসব হিসাবের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্ত করতে দিয়ে থাকে বিএফআইইউ।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *