■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম রোববার নতুন রেকর্ড গড়েছে। মার্কিন বাজারে এর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৪৫ ডলার ৫৭ সেন্ট, যা প্রায় আগের চেয়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি বিটকয়েনের দাম সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৮০ ডলারে উঠেছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অনুকূল নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বাড়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল।
গত শুক্রবার টানা অষ্টম দিনের মতো দাম বাড়ে বিটকয়েনের। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উত্থান এবং বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) প্রবাহ বাড়ায় এ বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে, শুক্রবার মার্কিন ডলার দুর্বল হয়ে পড়ে। বড় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর বহু সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য সরকারি অচলাবস্থার আশঙ্কায় বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এ কারণে পেরোলসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ পিছিয়ে যায়, যা অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থা নিয়ে আশঙ্কার কারণে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক থাকলেও বিটকয়েনের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন শেয়ারের উত্থানও এ বৃদ্ধিকে সহায়তা করছে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন, এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর পরিবারও ক্রিপ্টোকারেন্সির বড় সমর্থক। তাঁরা বিভিন্ন ক্রিপ্টো উদ্যোগে জড়িত, যা ট্রাম্পের সম্পদও বাড়িয়েছে।
ট্রাম্প ডিজিটাল সম্পদকে গ্রহণ করায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান পাল্টে গেছে। তাঁর আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে সরকার ক্রিপ্টো শিল্পের প্রতি সংশয়ী ছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসনে গত জুলাই মাসে প্রতিনিধি পরিষদ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিপ্টো বিল পাস করেছে। এসব আইনি পরিবর্তনের ফলে বিটকয়েনের দাম এক লাফে বেড়ে গেছে।
ক্রিপ্টো প্রাইম ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ফ্যালকনএক্সের মার্কেট বিভাগের সহপ্রধান জোশুয়া লিমকে উদ্ধৃত করে ব্লুমবার্গ লিখেছে, ‘শেয়ারবাজার, সোনা এমনকি পোকেমন কার্ডের মতো সংগ্রহযোগ্য জিনিসও যখন সর্বোচ্চ দামে পৌঁছাচ্ছে, তখন বিটকয়েন বাড়াটা অবাক করার মতো নয়। ডলারের অবমূল্যায়নের আশঙ্কা থেকেই এই প্রবণতা।’
উল্লেখ্য, বিটকয়েনের যাত্রা শুরুতে ২০০৯ সালে এর দাম ছিল ১ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬২ টাকা। ওই বছর থেকেই এর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ ডলারে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ৩২৭ ডলার বা ২৬ হাজার ১৬০ টাকা। ২০১৬ সালের নভেম্বরে দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৭৩৫ ডলার। ২০১৭ সালের নভেম্বরে নয়গুণ বেড়ে হয় ৮ হাজার ৭৯৫ ডলার।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রায় আড়াই গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৬৫০ ডলারে। এরপর এর দাম কমতে থাকে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দাম কমে ৩ হাজার ১৮৩ ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৯ সালে আবার এর দাম বাড়তে থাকে। ওই বছরের জুলাইয়ে দাম বেড়ে হয় ১১ হাজার ৩৭০ ডলার। ২০২০ সালের মার্চে আরও বেড়ে হয় ৫ হাজার ১৬৫ ডলার। ২০২০ সালের নভেম্বরে দাম তিনগুণ বেড়ে হয় ১৯ হাজার ১৩৫ ডলার।
২০২১ সালের মার্চে আড়াই গুণ বেড়ে হয় ৪৮ হাজার ৯০৯ ডলার। ২০২১ সালের জুলাইয়ে দাম আবার কমে ৩৩ হাজার ৫১৫ ডলারে নেমে যায়। একই বছরের নভেম্বরে বিটকয়েনের দাম এর ইতিহাসে সর্বোচ্চ বেড়ে ৬৪ হাজার ৪০০ ডলারে উঠে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে করোনার নেতিবাচক প্রভাব প্রকট হয়ে উঠলে বিশ্ব মন্দা শুরু হয়ে যায়। ফলে বিটকয়েনের দামও কমতে থাকে।
২০২২ সালের শুরুতে দাম কমে অর্ধেকে নেমে আসে। এ বছরের জানুয়ারিতে এর দাম দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৭০ ডলারে। এপ্রিলে কিছুটা বেড়ে ৪৫ হাজার ৮৫৭ ডলারে উঠে। জুনে দাম আরও কমে ১৮ হাজার ৯৪৮ ডলারে নেমে যায়। আগস্টে সামান্য বেড়ে ২৪ হাজার ৪৬১ ডলারে উঠে। এর পর দাম কমে ১৯ হাজার ৭১ ডলারে দাঁড়ায়। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের পরে প্রথমবারের মতো বিটকয়েনের দাম মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। এ ঘটনা ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। তবে এই সমীক্ষায় আরও এগিয়ে আছে ইথার, ১ মাসের ব্যবধানে ৪১ শতাংশ দাম বেড়েছে ডিজিটাল মুদ্রাটির।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিটকয়েন স্পট ইটিএফ অনুমোদন পাওয়ার পর এর মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মার্চ মাসে এর মূল্য ৭৩ হাজার ৮৩৫ ডলার অতিক্রম করে।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বিটকয়েনের চতুর্থ হালভিং ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতি মাইনিং ব্লকের পুরস্কার ৬ দশমিক ২৫ বিটকয়েন থেকে কমিয়ে ৩ দশমিক ২৫ বিটকয়েন করা হয়। হালভিং ইভেন্টটি বিটকয়েনের সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যা ঐতিহ্যগতভাবে বিটকয়েনের মূল্য বাড়াতে সাহায্য করে। এই ইভেন্টের পর বিটকয়েনের মূল্য কিছুদিন ৬৩ হাজার ৮২১ ডলারে স্থির ছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই তরতর করে বাড়তে শুরু করেছিল বিটকয়েনের দাম। গত নভেম্বর মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে বিটকয়েন নতুন রেকর্ড গড়ে। গত ৭ নভেম্বর এর মূল্য ৭৬ হাজার ৯৯৯ ডলার এবং ১০ নভেম্বর ৮০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। ডিসেম্বরের শুরুতে এর মূল্য ১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা ক্রিপ্টো বাজারে একটি নতুন যুগের সূচনা করে।