■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
আবারও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছেন টেসলা ও টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত ধনীদের তালিকায় ফের শীর্ষে উঠলেন তিনি। এর আগের তালিকায়ও তিনি শীর্ষে ছিলেন।
বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পণ্য প্রকৌশলী, সোলারসিটির চেয়ারম্যান, দি বোরিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, নিউরালিংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এবং পেপ্যালের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়াও তিনি হাইপারলুপ নামক কল্পিত উচ্চ গতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থার উদ্ভাবক। ২০১৮ সালে ইলন মাস্ক ‘ফেলো অব দি রয়্যাল সোসাইটি’ নির্বাচিত হন। একই বছর ফোর্বস সাময়িকী ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি’ তালিকায় ২৫তম স্থানে তার নাম ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে ফোর্বসের ‘আমেরিকার সবচেয়ে উদ্ভাবনী নেতৃত্ব’ তালিকায় যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত ইলন মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি এবং তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৬৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইলন মাস্কের মা একজন কানাডিয়ান ও বাবা একজন দক্ষিণ আফ্রিকান। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় বড় হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সতের বছর বয়সে কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে কানাডা গমনের পূর্বে প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প সময়ের জন্য লেখাপড়া করেছিলেন। দুই বছর কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার পর পেন্সিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন এবং অর্থনীতি ও পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।
তবে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তার নিট সম্পদ প্রায় ৩০ শতাংশ কমে ১২৪ বিলিয়ন (১২ হাজার ৪০০) ডলারে নেমে এসেছে। মূলত তার সম্পদের একটা বিশাল অংশ দান করে দেওয়ায় তিনি শীর্ষ ১০-এ থাকতে পারেননি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী এখন তার অবস্থান ১২তম স্থানে। এর আগে তিনি পঞ্চম স্থানে ছিলেন। আর তার স্থানে উঠে এসেছেন মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বালমার। তিনি বর্তমানে ১৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের মালিক।
বিল গেটস ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আগামী দুই দশকে তার সম্পদের প্রায় সবই দান করে দেবেন গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে।
বিল গেটসের এই সম্পদ কমার প্রধান এবং একমাত্র কারণ তার উদারতা ও দানশীলতা। কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে গেটস-মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার দান করেছেন বিল গেটস। করোনা টিকা গবেষণা খাতেও বিশাল অঙ্কের অর্থ দান করেছিলেন তিনি।
বিল গেটসের জায়গায় এখন এসেছেন মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বালমার, যিনি একসময় গেটসের সহকারী ছিলেন। তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এটি গেটসের চেয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার বেশি। এ ঘটনা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর, কারণ সাধারণত প্রতিষ্ঠাতা কর্মচারীর চেয়ে ধনী থাকেন।
স্টিভ বালমার মাইক্রোসফটের সিইও হন ২০০০ সালে এবং ২০১৪ সালে কোম্পানি ছাড়েন। তিনি তখন কোম্পানির প্রায় ৪ শতাংশ শেয়ার নিজের কাছে রেখে দেন। এর পর থেকে মাইক্রোসফটের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে, ফলে বালমারের সম্পদও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।
বালমার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল দল লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্সের মালিক। তিনি একসময় বলেছিলেন, গেটস এবং পল অ্যালেন যখন তাদের শেয়ার বিক্রি করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন, তখন তিনি তার মাইক্রোসফট শেয়ার ধরে রেখেছিলেন। এই সিদ্ধান্তই আজ তাকে গেটসের চেয়ে ধনী করে তুলেছে।
বিল গেটস গত মে মাসে এক ব্লগ পোস্টে জানান, তার সম্পদ প্রায় ১০ হাজার ৮০০ কোটিতে নেমেছে এবং আগামী দুই দশকে তিনি এর প্রায় সবই দান করে দিতে চান। তিনি বলেন, গেটস ফাউন্ডেশন ২০৪৫ সালের মধ্যে ২০ হাজার কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করবে।
গেটসের এই ঘটনাটি বিশ্বে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে, যেখানে একজন প্রতিষ্ঠাতা তার দানের মাধ্যমে নিজের সম্পদ স্বেচ্ছায় কমিয়ে দিয়েছেন এবং তার এক সাবেক কর্মচারী তাকে সম্পদের দিক থেকে ছাড়িয়ে গেছেন। এটি শুধু ধন-সম্পদের গল্প নয়, বরং মূল্যবোধ, দান এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের এক অনন্য উদাহরণ।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে থাকা শীর্ষ ব্যক্তিরা
১. ইলন মাস্ক (মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার)
২. মার্ক জাকারবার্গ (মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার)
৩. ল্যারি এলিসন (মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার)
৪. জেফ বেজোস (মোট সম্পদের পরিমাণ ২৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার)
৫. স্টিভ বালমার (মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার)
৬. ল্যারি পেইজ (মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার)
৭. বেরনার্ড আর্নল্ট (মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার)
৮. সের্গেই ব্রেইন (মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার)
৯. ওয়ারেন বাফেট (মোট সম্পদের পরিমাণ ১৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার)
১০. জেনসেন হুয়াং (মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার)
১১. মাইকেল ডেল (মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার)
১২. বিল গেটস (মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার)