■ গাজীপুর প্রতিনিধি ■
প্রায় ১৭ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর সিনিয়র জেল সুপার আল মামুন বলেন, সোমবার আদালত থেকে আব্দুস সালাম পিন্টুর জামিনের কাগজপত্র কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। মঙ্গলবার সকালে তা যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকায় বেলা ১১ টা ৪ মিনিটে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কারাগার থেকে মুক্তির পর নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন পিন্টু। এসময় ছাদ খোলা গাড়িতে মাথা বের করে শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন তিনি।
কাশিমপুর থেকে আব্দুস সালাম পিন্টু সরাসরি রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যাবেন। এরপর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন তার ছোট ভাই।
জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও বিএনপি প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন।
আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে সম্প্রতি রায় দেন হাইকোর্ট। ডেথ রেফারেন্স নাকচ করে এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে গত ১ ডিসেম্বর এ রায় দেওয়া হয়।
২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার হন আব্দুস সালাম পিন্টু। পরে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ফাঁসি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সম্প্রতি হাইকোর্টে এই মামলার রায়ে খালাস পান পিন্টুসহ অন্যরা।
আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার জোট সরকার গঠনের পর তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৯ সালে ১৬ মে আব্দুস সালাম পিন্টুর বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে গরু চুরিসহ লুটপাটের মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভূঞাপুর উপজেলার ভদ্রশিমুল গ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, চুরি ও মারধরের অভিযোগ আনা হয় পিন্টুসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে। এ মামলার বাদী ছিলেন ভূঞাপুরের গাবসারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। এভাবে অসংখ্য মামলা দিয়ে হয়রানি, রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে হেনস্থাসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন পিন্টু। তিনি গোপালপুর উপজেলাধীন যমুনা বিধৌত গুলিপেচা গ্রামের ডা. মরহুম মহিউদ্দিন মিয়ার জ্যৈষ্ঠ সন্তান। ডা. মহিউদ্দিন এলাকায় মহু ডাক্তার নামে পরিচিত ছিলেন। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর আঙ্গুর কোম্পানি, হাকিম কোম্পানি, ভোলা কোম্পানি ও আরজু কোম্পানির সব সদস্যকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন।