সাদা পাথর লুটকারী কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি সভাপতির পদ স্থগিত

■ সিলেট প্রতিনিধি ■

সাদা পাথর লুট ও চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিএনপির নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দীনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তাঁর স্থলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাজি আব্দুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে সাহাব উদ্দীনকে মোবাইলে কল দিলে তিনি বলেন, ‘আমি তো এখনো জানি না এ বিষয়ে। পরে আলাপ করমুনে, এখন একটা মিটিংয়ে আছি।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চাঁদাবাজি ও বালু-পাথর লুটপাটে সাহাব উদ্দীনের নাম জড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি দেড় শ একর ভূমি দখলদার হিসেবে অভিযুক্ত হন সাহাব উদ্দীন। ওই সময় ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর ও পর্যটনকেন্দ্রের জায়গার ওপর নির্মাণাধীন সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। লুট করা হয় স্থলবন্দরের নির্মাণসামগ্রী। পরে ভোলাগঞ্জে রেলওয়ের সংরক্ষিত এলাকা এমনকি সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর লুটপাটের পেছনে তাঁর মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

বিশেষ করে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি ও স্থানীয় বাংকারের পাথর লুট করে সাহাব উদ্দীনের নিয়ন্ত্রণাধীন জায়গা নদীর তীরে এখনো ডাম্পিং করা হচ্ছে।

নানা অভিযোগে গত মার্চে জেলা বিএনপি তাঁকে শোকজ করে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় তদন্ত করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে কেন্দ্রীয় কমিটি গতকাল তাঁকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে বলে জানিয়েছেন দলটির সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী।

বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘দখলসূত্রে সরকারি জমির মালিক বিএনপি নেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় প্রায় ৭০ একর জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। এসব স্থানে থাকা ছোট-বড় ১০০টি পাথর ভাঙার (স্টোন ক্রাশার) যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় গত ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারি জমি দখল ও লুটপাটের ঘটনায় বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ সংঘটিত হবে, তা কখনো ভাবা যায় না। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও নেতৃত্বের চরম অবমাননা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই নেতার পদ স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ বিএনপিতে থাকতে পারবে না। সেই সঙ্গে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ যাতে অপকর্ম-লুটপাট করতে না পারে, সে জন্য প্রশাসনকে আগে থেকেই জানানো হয়েছে। প্রশাসন যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সেটি আমরা জানিয়েছিলাম। স্থানীয়ভাবেও সাদাপাথর লুটপাটের বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের সুযোগে শাহ ভোলাগঞ্জের আরেফিন টিলা ও রোপওয়ে বাংকার থেকে পাথর তুলে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

‘সাদাপাথর’ ও আশপাশের বসতবাড়ি থেকেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পাথর উত্তোলন করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

গত দুই সপ্তাহে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে নতুন বালু-পাথরের স্তর নেমে এলেও, ঢলের পর শুধু বালু দেখা গেছে—পাথর আগেই লুট হয়ে গেছে। এর নেপথ্যে নাম আসে প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক নেতার।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *